মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
এই নির্দেশনা জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
ঘটনা ও ঘোষণার বিস্তারিত
সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমপি অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬)-এর ২৯ ধারার ক্ষমতাবলে আগামী ১১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকবে।
বিজ্ঞপ্তিতে যেসব এলাকা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে — প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর প্রবেশ গেট, এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মুখস্থ এলাকা।
ডিএমপি জানিয়েছে, এসব এলাকায় যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বা সামাজিক জমায়েত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। তাই জননিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছে পুলিশ প্রশাসন।
নিষেধাজ্ঞার কারণ ও প্রেক্ষাপট
ডিএমপি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে সমাবেশ ও মানববন্ধনের ঘোষণা আসছিল। এসব কর্মসূচির কারণে আদালত চত্বর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকার আশেপাশে জনসমাগম বাড়ছিল, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছিল।
এছাড়া, প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন ও সুপ্রিম কোর্টের মতো সংবেদনশীল স্থানের আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের মতে, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, অতীতে এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে বিক্ষোভ, শোভাযাত্রা বা অবস্থান ধর্মঘটের কারণে যান চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছিল। এবার যাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চলাফেরায় সমস্যা না হয়, সেজন্য আগেভাগেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র সতর্কবার্তা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কেউ যদি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া বা প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএমপি জানিয়েছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
একজন ডিএমপি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা চাই সবাই আইন মেনে চলুক। জনসাধারণের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো ধরনের জনসমাবেশ বা মিছিল করার চেষ্টা করে, তবে আইন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতীতে এমন নিষেধাজ্ঞা ও এর প্রভাব
রাজধানীতে এর আগেও এমন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। বিশেষ করে বড় রাজনৈতিক আন্দোলন, আদালত সংশ্লিষ্ট মামলার রায় বা সংবেদনশীল ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি সময় সময় সভা-সমাবেশ সীমিত করে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত অস্থায়ী হয় এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনপূর্ব সময়ে এবং ২০২৩ সালের শেষ দিকে এমনই কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। তখনও প্রধান বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট চত্বর ও সচিবালয় সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ রাখা হয়।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
রাজধানীর সচেতন নাগরিকদের অনেকেই ডিএমপি’র এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, সংবেদনশীল এলাকায় অপ্রয়োজনীয় ভিড় বা কর্মসূচি আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদিকে, কিছু নাগরিক বলেছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ গণতন্ত্রের একটি অংশ, তাই এমন নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তারা চান, প্রশাসন যেন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেয়— যাতে একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হয়, অন্যদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও বজায় থাকে।
প্রশাসনের পরবর্তী পরিকল্পনা
ডিএমপি জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত” বহাল থাকবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পুনরায় তা পর্যালোচনা করা হবে।
এছাড়া, যারা সভা-সমাবেশ বা মানববন্ধনের অনুমতি নিতে চান, তাদের লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে এবং ডিএমপি’র বিশেষ অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারবেন না।
একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের ছুটিও সীমিত করা হয়েছে, যাতে যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত মোতায়েন করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বাড়ানো হচ্ছে সিসিটিভি নজরদারি।
রাজধানীতে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ডিএমপি’র এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়। তবে এবার যে এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে— যা ইঙ্গিত দিচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও কড়াকড়ি।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, এই নিষেধাজ্ঞা কতদিন বহাল থাকবে এবং এর বাস্তব প্রভাব কী হবে নাগরিক জীবনে? বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক থাকলে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
এম আর এম – ২১৭০,Signalbd.com



