আঞ্চলিক

‘এটাই হয়ত শেষ চাওয়া’: সহকর্মীকে এসএমএস দিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক

Advertisement

রোববার দুপুরে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক সৈয়দ নাঈম রহমান। বের হওয়ার আগে এক সহকর্মীকে পাঠানো এসএমএসে তিনি লিখেছিলেন, “এটাই হয়ত আমার শেষ চাওয়া।” এতে সহকর্মী ও পরিবারে নেমেছে গভীর উদ্বেগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক নাঈম রহমান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক সৈয়দ নাঈম রহমান রোববার (৯ নভেম্বর) সকালবেলায় নিয়মিত অফিসে যান। কিন্তু দুপুরের পর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার পর অফিস কক্ষে নিজের ব্যাগ ও পরিচয়পত্র রেখে তিনি বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ এবং পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিটে তার ফোনের শেষ অবস্থান শনাক্ত হয় রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায়। এরপর থেকে কোনো সাড়া মেলেনি তার।

নিখোঁজের আগে সহকর্মীকে পাঠানো বার্তায় ইঙ্গিত

নাঈম রহমানের নিখোঁজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে, তিনি তার এক সহকর্মীকে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি লিখেন, “এটাই হয়তো আমার শেষ চাওয়া। আমার ছোট বোনের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিও।”
সহকর্মীর কাছে পাঠানো এই এসএমএস থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। বার্তায় তিনি নিজের ঋণগ্রস্ত অবস্থার কথাও উল্লেখ করেন বলে জানা গেছে।
সহকর্মীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নাঈম মানসিক চাপে ছিলেন এবং পারিবারিক ও আর্থিক দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন।

অফিসে নিয়মিত ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন নাঈম

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, নাঈম রহমান ছিলেন শান্ত-স্বভাবের, অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা। প্রতিদিন নিয়মিত অফিস করতেন, কাজে ছিলেন মনোযোগী। সহকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল আন্তরিক।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “নাঈম খুবই ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। হঠাৎ এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অস্বাভাবিক।”

বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, “আমরা সবাই নাঈমের খোঁজ করছি। তিনি পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য। মা, স্ত্রী, মেয়ে ও ছোট বোন তার ফেরার অপেক্ষায় আছেন।”

পরিবারের উদ্বেগ ও পুলিশের অনুসন্ধান

নাঈম রহমানের মা সাজ্জাদা রহমান জলি মিরপুর থানায় তার নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেকে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, তার ফোনও বন্ধ।
পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান ও সম্ভাব্য রুট ধরে অনুসন্ধান চলছে। সায়েদাবাদ থেকে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

একজন তদন্ত কর্মকর্তা জানান, “আমরা সায়েদাবাদ এলাকা এবং আশপাশের কয়েকটি রুটে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সহকর্মী ও পরিবারের অনুরোধ – খোঁজ পেলে জানাতে

নাঈম রহমানের সহকর্মী ও পরিবারবর্গ সবাই তাকে খুঁজে পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছেন।
তার সহকর্মীরা বলছেন, “যদি কেউ নাঈম রহমানকে দেখে থাকেন, অনুগ্রহ করে নিকটস্থ থানায় বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, কাজের চাপ, আর্থিক সমস্যা ও পারিবারিক টানাপোড়েন মিলেই হয়তো তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।

মানসিক চাপ ও আর্থিক সমস্যায় বিপর্যস্ততার ইঙ্গিত

নাঈম রহমান দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও আর্থিক চাপে ছিলেন বলে জানা গেছে। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনি সম্প্রতি কিছু ব্যক্তিগত ঋণের বোঝা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানসিক চাপ ও একাকিত্ব অনেক সময় মানুষকে ভয়ংকর সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিতে পারে। কর্মজীবনে অতিরিক্ত চাপ, পরিবারে দুশ্চিন্তা ও আর্থিক অনিশ্চয়তা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
তারা পরামর্শ দিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে সহকর্মী ও পরিবারের উচিত দ্রুত মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা নেওয়া এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান ও করণীয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নাঈম রহমানের নিখোঁজের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
অতিরিক্ত পরিচালক মাসুম বিল্লাহ বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। নাঈম আমাদের পরিবারের অংশ, আমরা চাই দ্রুত তাকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে।”
ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা ও মানবসম্পদ বিভাগ ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে।

অফিসে ফিরে আসবেন কি নাঈম রহমান?

সহকর্মীরা এখনো আশাবাদী যে, হয়তো তিনি নিজে থেকেই ফিরে আসবেন। নাঈমের পরিবার প্রতিদিন অপেক্ষা করছে তার খোঁজের জন্য।
কর্মস্থলে তার ডেস্কে এখনো রাখা আছে ফাইল, নোটবুক ও অফিস ব্যাগ—যেন তিনি একটু পরেই ফিরে এসে কাজ শুরু করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের একটাই প্রার্থনা—“তিনি যেন দ্রুত নিরাপদে ফিরে আসেন।”

একজন দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সৈয়দ নাঈম রহমানের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া সহকর্মী, পরিবার ও ব্যাংক প্রশাসনের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তার সর্বশেষ এসএমএসের ভাষা যেন এক অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দেয়। তবে এখনো সবাই আশা করছেন—নাঈম রহমান সুস্থ ও নিরাপদে পরিবারের কাছে ফিরে আসবেন।

এম আর এম – ২১৬৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button