কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। দ্রুতগামী ট্রাক, সিএনজি ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে মুহূর্তের মধ্যে থেমে যায় তিনটি জীবনের গতি।
ঘটনাস্থলে মর্মান্তিক দৃশ্য, নিহত ৩
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামে সোমবার বিকেলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। স্থানীয়রা জানায়, দ্রুতগতির একটি ট্রাক এবং বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয় এবং আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দুর্ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। পুলিশ জানায়, নিহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তাদের মরদেহ চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
কীভাবে ঘটল ভয়াবহ ত্রিমুখী সংঘর্ষ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চৌদ্দগ্রাম থেকে লাকসামগামী একটি ট্রাক উচ্চ গতিতে ফেলনা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী সিএনজি ও একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা একসঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি হয়। তীব্র সংঘর্ষে দুটো যানবাহনই দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দুর্ঘটনার শব্দে আমরা দৌড়ে যাই। তখন দেখি সিএনজি ও অটোরিকশার যাত্রীরা রক্তাক্ত অবস্থায় ছিটকে পড়ে আছে।” স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ট্রাক, সিএনজি ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গতি ও অসতর্কতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই ট্রাকচালক পালিয়ে গেছে, তাকে আটক করার চেষ্টা চলছে।
আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ আহতের মাথা ও পায়ে গুরুতর আঘাত লেগেছে।
এলাকায় শোকের ছায়া, যান চলাচল বন্ধ ছিল ঘণ্টাখানেক
দুর্ঘটনার পর চৌদ্দগ্রাম-লাকসাম সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে। নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় বাজারে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে, যা এলাকায় শোকের পরিবেশ তৈরি করেছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এই রাস্তায় প্রতিদিনই দ্রুতগতিতে ট্রাক চলে। বারবার অনুরোধ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ তিনটি জীবন হারিয়ে গেল।”
সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়ছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ১০ মাসেই প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তার মান, অতিরিক্ত গতি ও ট্রাফিক আইন অমান্য করাই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ।
ট্রাফিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চৌদ্দগ্রাম-লাকসাম সড়কটি সরু এবং যানবাহনের চাপ তুলনামূলক বেশি। তাই নিয়মিত গতিনিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক মনিটরিং জরুরি হয়ে পড়েছে।
নিরাপদ সড়ক নিয়ে স্থানীয়দের দাবি
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে স্পিডব্রেকার ও সাইনবোর্ড স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া, অতিরিক্ত গতির ট্রাক চলাচলে কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত ট্রাফিক টহলের দাবি উঠেছে।
ভবিষ্যৎ করণীয় ও প্রশাসনের পরিকল্পনা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। একই সঙ্গে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, “আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিনটি প্রাণহানি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আবারও মনে করিয়ে দেয় সড়কে নিরাপত্তার গুরুত্ব কতটা বেশি। দ্রুতগতির প্রতিযোগিতা, অবহেলা ও সচেতনতার অভাব যেন বারবার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই ঘটনার পর প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে আসবে।
এম আর এম – ২১৬৫,Signalbd.com



