দেশের বিভিন্ন শহরে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে ৩০–৪০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। সরবরাহ সংকট ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজারে হঠাৎ দাম বৃদ্ধি
রাজধানীর খুচরা বাজারে গত ৩–৪ দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার এবং অন্যান্য এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, যেখানে সপ্তাহের শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল কেজিপ্রতি ৯০ টাকা, সেখানে এখন দাম ১২০–১৩০ টাকার মধ্যে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজার থেকে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়ানো অনিবার্য হয়েছে। পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর বলেন, “পাইকারিতে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদেরও খুচরা বিক্রির দাম বাড়াতে হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না কেন এমনটা হলো।”
সরবরাহ সংকট ও মৌসুমী প্রভাব
স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “দেশের পেঁয়াজ মৌসুমের শেষ পর্যায়ে। কৃষকের হাতে এখনও যথেষ্ট পেঁয়াজ রয়েছে, তবে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টির কারণে। এছাড়া নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে এখনও এক থেকে দুই মাস সময় লাগবে। এই সময় বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন জানান, সরবরাহ এখনো যথেষ্ট। তবে বাজারে যে হারের দাম বেড়েছে, তা নিছক ব্যবসায়ীর কারসাজি ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
কারসাজি ও সিন্ডিকেটের প্রভাব
বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করছে। শ্যামবাজারের আড়তদাররা বলছেন, যারা পেঁয়াজ মজুত করেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে রেখেছেন। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “এলসি খোলার অনুমতি না থাকায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছে।”
পাইকারি ও খুচরা বাজারের চিত্র
রাজধানীর পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৯৫–১০৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারেও গত তিন দিনে ২০–২৫ টাকা বৃদ্ধি দেখা গেছে।
খুচরা বাজারে ক্রেতারা দাম বৃদ্ধির কারণে সমস্যায় পড়েছেন। নাবিল নামের একজন ক্রেতা জানান, “দাম বৃদ্ধির কারণে এখন স্বাভাবিক দামে প্রয়োজনমতো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে দামের চাপ বাড়বে এবং সংসারের বাজেট সংকুচিত হবে।”
আমদানি অনুমতি ও সরকারি পদক্ষেপ
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ৩৫–৩৬ লাখ টন। এই সময়ে দেশে উৎপাদন প্রায় চাহিদার সমান হলেও, ভারত থেকে আমদানির অনুমতি না থাকায় বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।
শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ জানান, আমদানির অনুমতি দ্রুত দিলে দাম কমে আসবে। তিনি বলেন, “আমদানি হলে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার ঘরে নেমে আসতে পারে। তবে কৃষকদের ক্ষতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী এক থেকে দুই মাসে নতুন মৌসুমি পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম স্বাভাবিক হতে পারে। তবে সরবরাহ না বাড়লে বা সিন্ডিকেট চলতে থাকলে দামের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, “পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি শুধুমাত্র সরবরাহ সংকটের কারণে নয়, ব্যবসায়ীদের কৌশলও এতে ভূমিকা রাখছে। আইপি অনুমোদন এবং আমদানি ব্যবস্থা দ্রুত না নিলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।”
দেশের পেঁয়াজ বাজার বর্তমানে অস্থিতিশীল। সরবরাহ সংকট, বৃষ্টির কারণে ক্ষতি, সিন্ডিকেটের কার্যক্রম এবং আমদানির জটিলতা মিলিয়ে দাম দ্রুত বাড়ছে। সরকারি পদক্ষেপ ও আমদানি অনুমোদন ব্যতীত দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
এম আর এম – ২১১৩,Signalbd.com



