চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া হোসেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রকাশ দুলাল (৪০) নামের এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ ৪ দিন পর উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত দুলাল ছিলেন পূর্বচর কৃষ্ণপুর গ্রামের হাশেম মেলকারের বড় ছেলে।
ঘটনার বিস্তারিত
দুলাল ২৭ অক্টোবর ফজর নামাজ পড়তে বের হন এবং তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। চার দিন নিখোঁজ থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মসজিদে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। মসজিদের ইমাম এবং আনসার সদস্যদের নেতৃত্বে দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে দুলালের অর্ধগলিত মরদেহ ছাদে পাওয়া যায়। পরে তারা থানা পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুলালের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। নিহতের স্ত্রী তামান্না বেগম জানান, দুলালের কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। তিনি ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতেন এবং পরিবারের সাথে সুখে জীবন যাপন করতেন।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া
দুলালের ছেলে বলেন, তার পিতার কোনো শত্রু ছিল না এবং তিনি নিয়মিত সংসার চালাতেন। পরিবারের পক্ষ থেকে থানা পুলিশে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়নি। নিহত দুলালের পরিবারের সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করেছেন এবং ময়নাতদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত
চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খায়রুল কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নিহত ব্যক্তির মরদেহ অর্ধগলিত হওয়ায় পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চাঁদপুরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাইমচর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকায় এমন ঘটনা প্রথম নয়। মসজিদের ছাদে মরদেহ পাওয়াকে স্থানীয়রা অস্বাভাবিক মনে করছেন। স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি হত্যাকাণ্ড।
পুলিশ এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো সকল প্রমাণ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা এই ঘটনায় আতঙ্ক ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেন, মসজিদের ছাদে কীভাবে ৪ দিন মরদেহ পড়ে থাকতে পারল তা রহস্য। তারা চাইছেন প্রশাসন এবং পুলিশ সম্পূর্ণ সত্য উদঘাটন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু সামাজিক সচেতনতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। মসজিদসহ জনসাধারণের চলাচলের নিরাপত্তা, এলাকার মনিটরিং এবং পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা উচিত।
এ ধরনের ঘটনা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশি তদারকির গুরুত্ব আরও প্রমাণ করেছে। স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু তদন্তের আশা করছে।
হোসেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দুলালের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার ঘটনাটি চাঁদপুরে শোক ও উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। পরিবারের সদস্যরা এবং স্থানীয়রা ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে জোর দিয়েছেন।
পুলিশ এবং তদন্ত সংস্থা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত, মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি অন্য কোনো কারণে তা দ্রুত স্পষ্ট হওয়া জরুরি।
এম আর এম – ২০২২,Signalbd.com



