অর্থনীতি

বিশ্বের প্রথম হাফ-ট্রিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক: ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক

Advertisement

বিশ্বের প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক জগতের এক অনন্য ঘটনা ঘটেছে। টেসলা এবং স্পেসএক্সের সিইও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি এক্সএআই-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ অতিক্রম করেছেন। এই মাইলফলক তাকে বিশ্বের প্রথম হাফ-ট্রিলিয়নিয়ার হিসেবে অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (১ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুরের পর ফোর্বস বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে মাস্কের সম্পদ ৫০০.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও দিনের শেষে তা সামান্য কমে ৪৯৯ বিলিয়ন ডলারের ওপরে দাঁড়ায়, তবুও এটি প্রযুক্তি জগতের এক নজিরবিহীন অর্জন।

মাস্কের সম্পদের মূল ভিত্তি: টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সএআই

ইলন মাস্কের বিপুল সম্পদের মূল ভিত্তি হলো তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা-র প্রায় ১২ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। চলতি বছরের শুরু থেকে টেসলার শেয়ারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে টেসলার শেয়ার আগের দিনের তুলনায় ৩.৩ শতাংশ বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে।

এছাড়া, মাস্কের রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান এক্সএআই-এর শেয়ার মূল্যও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে স্পেসএক্স-এর নতুন রকেট উৎক্ষেপণ ও এক্সএআই-এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বাণিজ্যিক সাফল্য তার সম্পদ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, মাস্কের সম্পদ বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীরা তার কোম্পানিগুলোর প্রতি আস্থাকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন। গত মাসে মাস্ক প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের টেসলার শেয়ার কিনেছেন, যা তার ব্যবসার প্রতি বিশ্বাসের প্রকাশ।

বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি: ল্যারি এলিসন

মাস্কের পরবর্তী ধনী ব্যক্তি হলেন ওরাকল (Oracle) এর প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৫০.৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও এক সময় এলিসন ওরাকলের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির কারণে মাস্ককে অতিক্রম করেছিলেন, বর্তমানে মাস্ক আবারও বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন।

বিবিসি বলছে, মাস্কের সম্পদের সবচেয়ে বড় অংশ তার টেসলা শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি। তবে তার অন্যান্য উদ্যোগ যেমন স্পেসএক্স, এক্সএআই এবং নিউরালিঙ্কেও তার গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ রয়েছে। এই বিনিয়োগগুলোও তাকে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক জগতে অনন্য অবস্থানে রাখছে।

মাস্কের সাফল্যের পেছনের কাহিনী

ইলন মাস্কের এই সাফল্য কোনও একদিনে আসে নি। টেসলা, স্পেসএক্স, এক্সএআই, নিউরালিঙ্ক এবং আরও বিভিন্ন কোম্পানি গড়ে তোলার পেছনে তার ধারাবাহিক পরিশ্রম, ঝুঁকি গ্রহণ এবং উদ্ভাবনী চিন্তার অবদান রয়েছে।

টেসলার শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, মাস্কের রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে থাকা এবং কোম্পানিগুলোর উন্নয়নের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি। পূর্বে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি তার ব্যবসা ও প্রযুক্তি উদ্যোগে মনোনিবেশ করেছেন।

স্পেসএক্স-এর ক্ষেত্রে, মাস্ক নতুন প্রজেক্ট যেমন স্টারশিপ রকেট, মহাকাশ পর্যটন এবং চাঁদ ও মঙ্গলের অভিযানের জন্য উচ্চ প্রযুক্তির উৎকর্ষ নিয়ে কাজ করছেন। এক্সএআই-ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

বৈশ্বিক প্রযুক্তি জগতে মাস্কের প্রভাব

ইলন মাস্ক শুধুমাত্র ধনকুবের নয়, তিনি বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রতীক। টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। স্পেসএক্স মহাকাশ প্রযুক্তি এবং রকেট উৎক্ষেপণে নতুন দিগন্ত খুলেছে। এক্সএআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর জন্য উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করছে।

মাস্কের কর্মকাণ্ড অনেক উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি প্রেমীদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তার ধনী হওয়ার গল্প কেবল আর্থিক সাফল্যের প্রতীক নয়, এটি উদ্ভাবনী মানসিকতা, ঝুঁকি গ্রহণ এবং দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন।

ভবিষ্যতে মাস্কের পরিকল্পনা

ইলন মাস্কের পরিকল্পনা কেবল অর্থের উপর সীমাবদ্ধ নয়। তিনি মহাকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং মানবজাতির উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। স্পেসএক্স-এর মাধ্যমে তিনি চাঁদ ও মঙ্গলের কলোনাইজেশন প্রজেক্টের দিকে এগোচ্ছেন। এক্সএআই-এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানবজীবনের মান উন্নয়নের দিকে কাজ করছেন।

বিশ্বের প্রথম হাফ-ট্রিলিয়নিয়ার হওয়া ছাড়াও, মাস্ক প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং মানবজাতির উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

MAH – 13126 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button