ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করার দাবিতে আন্দোলনকারীদের এক অংশ উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ সাইয়িদ আহম্মেদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের নাম ফাহিম, আরমান ও সাধন। তাদের বিরুদ্ধে ভিডিও ফুটেজের প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী মামলা করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান এখনও চলমান এবং বাকি অংশগ্রহণকারীদের শনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে।
ঘটনা কোথায় এবং কিভাবে ঘটেছে
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ভৈরব জেলার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে রেলপথ অবরোধ করা হয়। ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরবে আটকা পড়ে। বেলা প্রায় ১২টার দিকে ট্রেনের ইঞ্জিন ও কাঁচে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। স্টেশন মাস্টার মো. ইউছুফ জানান, সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ট্রেনের গ্লাস ও ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আন্দোলনকারীরা ট্রেনের চলাচল বাধা দিয়ে তাদের দাবি জানাচ্ছিল।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিস্তারিত
গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই স্থানীয়। পুলিশ জানায়, তারা পাথর নিক্ষেপের সময় উপস্থিত ছিল এবং ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে থানার কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বাকি অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।
আন্দোলনের পটভূমি
ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে জেলা বাস্তবায়ন ঐক্যমঞ্চ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে। গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) আন্দোলনকারীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রেলপথও আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করা হয়। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) নৌপথও অবরোধের ঘোষণা দেন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছে। স্টেশন মাস্টার মো. ইউছুফ বলেন, “সরকারি সম্পত্তি ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
স্থানীয় জনতা এবং রেল ব্যবহারকারীরা গ্রেফতারের প্রশংসা করছে। তবে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন পথ অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের অবরোধমূলক আন্দোলন এবং সহিংসতা স্থানীয় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে রেলপথ অবরোধে যাত্রীদের যাতায়াত বিঘ্নিত হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা রোধে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ও প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ জরুরি। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
ভৈরবে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত তিনজন এবং চলমান তদন্তই প্রমাণ করছে, প্রশাসন সরকারি সম্পত্তি এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষায় সচেষ্ট। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনা রোধে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং সংলাপ প্রয়োজন।
এম আর এম – ১৯৯২,Signalbd.com



