ডিমের বাজারে অস্থিরতা: দাম বাড়লেই আমদানির প্রস্তুতি
বাংলাদেশে মুরগির ডিমের দাম দীর্ঘদিন ধরেই ওঠানামা করছে। সম্প্রতি বাজারে ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ঘুরছে। কিছুদিন আগেই এই দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা সাধারণ ভোক্তার জন্য বড় ধরণের চাপ তৈরি করে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (BTTC) এক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি ডিমের দাম আবার প্রতি ডজন ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে এবং শুল্ক ও কর মওকুফ করা হবে। এ ছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
কেন ডিমের দাম বাড়ছে?
দেশে ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন:
খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাওয়া
মুরগির খামারিদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি
বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়া
মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের প্রভাব
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন দেশে প্রায় ৪ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। অথচ অনেক খামার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, কারণ খাদ্য ও চিকেন ফিডের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এর ফলে বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে এবং দাম বেড়েছে।
পেঁয়াজের দামও বাড়তি: কী বলছে কমিশন?
শুধু ডিম নয়, বাজারে পেঁয়াজের দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কিছুদিন আগেই দাম ৯০ টাকার ঘর স্পর্শ করেছিল।
ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাব:
✔ পেঁয়াজের দাম যদি ৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
✔ শুল্ক ও কর কমিয়ে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তবুও চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকায় আমদানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কাঁচা মরিচের দামে আগুন
সাম্প্রতিক সময়ে কাঁচা মরিচের দামও বেড়ে গেছে। বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২২০ থেকে ২৬০ টাকা। সাধারণ ভোক্তাদের জন্য এটি একটি বড় ধরণের চাপ।
ট্যারিফ কমিশন এ বিষয়ে বলেছে—
✔ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাঁচা মরিচ আমদানিতে ২০% সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।
✔ শুল্কায়নের ক্ষেত্রে প্রকৃত বিনিময়মূল্য গণনা করা হবে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাজারে মরিচের দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সবজির বাজারে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ
ডিম, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের পাশাপাশি সবজির দামও বেড়ে গেছে। এজন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে বাজার তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।
✔ উৎপাদন পর্যায় থেকে খুচরা বিক্রয় পর্যন্ত সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
✔ অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি একটি অস্থায়ী সমাধান হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বাজারের স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব নয়। এজন্য—
কৃষক ও খামারিদের প্রণোদনা দিতে হবে।
উৎপাদন খরচ কমাতে ভর্তুকি দিতে হবে।
আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা বাড়াতে হবে।
পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনা
সরকার কয়েকটি উদ্যোগ নিচ্ছে—
✔ সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান বন্ধ করা।
✔ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা।
✔ মনিটরিং টিমের মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভাঙা।
✔ কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ।
ভোক্তাদের জন্য করণীয়
বাজারদর যাচাই করে পণ্য কেনা।
অপ্রয়োজনীয় মজুত এড়িয়ে চলা।
নকল ও নিম্নমানের পণ্য থেকে সতর্ক থাকা।
সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো
✔ ডিমের দাম ১৫০ টাকা ছাড়ালে আমদানির অনুমতি ও শুল্ক ছাড়।
✔ পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা ছাড়ালে আমদানির সুপারিশ।
✔ কাঁচা মরিচের আমদানিতে ২০% শুল্ক প্রত্যাহার।
✔ সবজির বাজারে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ।
MAH – 12649, Signalbd.com



