অর্থনীতি

বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে প্রথম চালানে এল ৩১৫ টন চাল

Advertisement

বেনাপোল বন্দরে ৪ মাস পর ভারত থেকে প্রথম চালের চালান এল

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: চার মাস বন্ধ থাকার পর আবারও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩১৫ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভারতীয় চালবোঝাই ৯টি ট্রাক বেনাপোল বন্দরের ৩১ নম্বর ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। শনিবার (২৩ আগস্ট) বন্দর থেকে এই চালের চালান খালাসের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

চালের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাজী মুসা করিম অ্যান্ড সন্স। সূত্র জানায়, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আরও কয়েকটি চালবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

বাণিজ্যিক অনুমতি ও আমদানি খরচ

আমদানিকারক আবদুস সামাদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মোট ৭ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ৬,০০০ টন সেদ্ধ চাল
  • ১,০০০ টন আতপ চাল

শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রথম চালানে তিনি ৩১৫ টন চাল আমদানি করেছেন। খরচ অনুযায়ী কেজিতে চালের দাম প্রায় ৫০ টাকা ৫০ পয়সা। বাজারে বিক্রয় করবেন প্রতি কেজি ৫১–৫২ টাকায়

দেশের বাজারে প্রভাব

বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল সর্বশেষ বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে চাল আমদানি করা হয়। দেশে প্রতি বছরের চালের চাহিদা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টন, যা উৎপাদিত হয় প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ টন। চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর আমদানি করতে হয়।

তিনি আরও জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত চাল দেশের বাজারে মূলত সেদ্ধ ও আতপ চাল হিসেবে আসে। সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে যাতে দেশের বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে। বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের আমদানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কাস্টম হাউস ও আমদানি প্রক্রিয়া

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার রাজন হোসেন জানান, এই চালের প্রতি টন আমদানি খরচ ৫৬০ মার্কিন ডলার। কাস্টমসের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্রুত বন্দর থেকে খালাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরে দীর্ঘ সময়ের পর চাল আমদানির ফলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিশেষ করে আশেপাশের জেলা যেমন যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ইত্যাদির বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে।

বাজারে দাম ও সরবরাহের প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে চালের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় আমদানি খরচও কম হয়। দেশের বাজারে চালের দাম ৫১–৫২ টাকা কেজি নির্ধারণের ফলে স্থানীয় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হবে।

চালের এই আমদানির ফলে কোনও প্রকার অভাব দেখা দেবে না এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিশেষত সেদ্ধ ও আতপ চালের বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যও চালের দামে বড় ধরনের প্রভাব কমবে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক

ভারতের সঙ্গে চাল আমদানির প্রক্রিয়া বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য সম্পর্কের অংশ। ভারতীয় চালের সরবরাহে সবসময় মূল্য ও মান দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে প্রতি বছর শত শত হাজার টন চাল আমদানি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আমদানির ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা মিলছে। একদিকে দেশে উৎপাদন থাকলেও, চাহিদা পূরণে এই ধরনের আমদানি অপরিহার্য।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় আমদানিকারকরা মনে করছেন, চালের আমদানি বাজারে স্থিতিশীলতা আনে। আবদুস সামাদ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হলো মানসম্মত চাল বাজারে সরবরাহ করা এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা।”

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, চালের খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা সকল প্রস্তুতি নেয়েছেন।

চলতি বছরের বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম

বেনাপোল বন্দরে চলতি বছর ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে চার মাসের মধ্যে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় কিছুটা বাজারে প্রভাব পড়েছিল। এবার চাল আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, তারা প্রতিনিয়ত সরকারি নীতি অনুযায়ী চালের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছেন। দ্রুত খালাস ও বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে ৩১৫ টন চালের প্রথম চালান দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের উদ্যোগ, আমদানিকারক ও কাস্টমসের সহায়তায় চাল দ্রুত বাজারে পৌঁছে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় থাকলে দেশের বাজারে চালের অভাব ও দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হবে।

এটি শুধুমাত্র বেনাপোল বা যশোর অঞ্চলের নয়, দেশের সকল জেলায় বাজার স্থিতিশীলতার প্রভাব ফেলবে।

MAH – 12453 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button