বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার জগতে শোকের ছায়া নেমেছে। আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে মুগদা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
হাফেজ ত্বকীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশের মহাসচিব শায়েখ সাদ সাইফুল্লাহ মাদানী। পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ রাত ১০টায় কুমিল্লার মুরাদনগরের ডালপা গ্রামের নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। বর্তমানে দাফনের শেষ প্রস্তুতি চলছে।
হাফেজ ত্বকীর চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা
সম্প্রতি হাফেজ ত্বকী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসকরা সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সময় ডেঙ্গুর প্রভাবে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সময়মতো সঠিক চিকিৎসা সাপোর্ট থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক।
হাফেজ ত্বকীর কোরআন প্রতিযোগিতার কীর্তি
হাফেজ ত্বকী ২০১৭ সালে জর্ডানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ৬২টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর কুয়েত ও বাহরাইনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায়ও তিনি বিজয়ী হন।
তার কীর্তির কারণে বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার জগতে তিনি এক নামকরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কোরআন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি অনুপ্রেরণার প্রতীক ছিলেন।
পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন
হাফেজ ত্বকী ২০০০ সালে কুমিল্লার মুরাদনগরের ডালপা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা বদিউল আলম একজন মাদরাসা শিক্ষক। শৈশব থেকেই ত্বকীর কোরআন পাঠের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়। তিনি ছোট বয়স থেকে মাদরাসায় ভর্তি হয়ে কোরআন হিফজ করেন।
তার পরিবারের সদস্যরা শোকাহত। স্থানীয় মুসলিম সমাজ ও কোরআন শিক্ষার্থীরা তার মৃত্যুতে গভীরভাবে মর্মাহত।
প্রতিক্রিয়া ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
হাফেজ ত্বকীর মৃত্যুর খবরে কোরআন শিক্ষার জগতে, শিক্ষাবিদ, ছাত্র ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছেন সহপাঠী, শিক্ষক এবং ধর্মীয় নেতা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদরাসা ও ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, হাফেজ ত্বকীর জীবন ও অর্জন নতুন প্রজন্মকে কোরআন শিক্ষা অর্জনের প্রেরণা দিবে।
দাফনের প্রস্তুতি ও আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিস্তারিত
দাফনের জন্য কুমিল্লার মুরাদনগরের ডালপা গ্রামে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবার মিলিতভাবে সুষ্ঠু দাফনের ব্যবস্থার দিকে নজর রাখছেন। রাত ১০টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।
স্থানীয় ওড়াবি প্রশাসন দাফন কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ডেঙ্গু নিয়ে সাধারণ সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ডেঙ্গু এখনো বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি। হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রশাসন সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও তথ্য প্রচার চালাচ্ছে। হাফেজ ত্বকীর মৃত্যুর ঘটনা জনগণকে সতর্ক করতে একটি গুরুতর বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হাফেজ ত্বকীর অকাল মৃত্যু বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার জগতে একটি বড় ক্ষতি। তার অর্জন, আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় সাফল্য, এবং পরিশ্রম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য এই ধরনের জীবনের গল্প শিক্ষণীয়। তবে ডেঙ্গু সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে আর কেউ এ ধরনের অকাল মৃত্যুর শিকার না হয়।
এম আর এম – ১৯৮৩,Signalbd.com



