গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে রাজধানীর রামপুরায় ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে মা মারা যান এবং ছেলে প্যারালাইজড হয়ে যায়। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাক্ষী মোস্তাফিজুর রহমান জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান, ১৯ জুলাই বিকেল আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে তিনি তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমানকে খাবার পৌঁছে দিতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে।
সাক্ষী জানান, তার ছেলে আইসক্রিম খেতে চাইল। তখন তিনি মা ও ছেলেকে নিয়ে বাসার নিচে নামেন। গেইটের বাইরে থেকে পুলিশের গুলি ছুড়ে তার ছেলের মাথায় লাগে এবং পরবর্তীতে একই গুলি তার মায়ের পেটে লাগে। মা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং ছেলে প্যারালাইজড হন।
আহত ও নিহতের চিকিৎসা পরিস্থিতি
সাক্ষী আরও বলেন, ছেলেকে প্রাথমিকভাবে ফেমাস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছেলের মাথায় অপারেশন করা হলেও ডানদিক প্যারালাইজড অবস্থায় থাকে এবং সে কথা বলতে বা চলাফেরা করতে সক্ষম নয়।
মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাকে ফরাজী হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মায়ের লাশ কিছু অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে রামপুরা থানা পুলিশের অনুমতিতে গ্রামে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর আবেগ
জবানবন্দিতে সাক্ষী কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং হত্যাকাণ্ড ও ছেলের পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থার জন্য দায়ীদের বিচার চান। তিনি জানান, “আমার মা মারা গেছে, আর আমার ছেলে কথা বলতে পারছে না। আমি চাই, যারা দায়ী, তাদের শাস্তি হোক।”
এ সময় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীর বক্তব্য শুনেন। সাক্ষী তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন যে, কোথায় পুলিশ গুলি করেছিল এবং তিনি কীভাবে তাৎক্ষণিকভাবে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মামলা
রামপুরার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন গ্রেফতার, বাকি চারজন পলাতক। মামলায় অভিযোগ হলো মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার মধ্যে হত্যাসহ সুনির্দিষ্ট ঘটনা অন্তর্ভুক্ত।
সাক্ষীর জবানবন্দি থেকে জানা যায়, এ ঘটনা চলাকালীন সময়ে বাসার কাছেই রামপুরা থানা ভবন অবস্থিত ছিল এবং পুলিশ সরাসরি গুলি চালানোতে যুক্ত ছিল।
আসামিপক্ষের প্রতিক্রিয়া
রামপুরার মামলায় আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জানান, ট্রাইব্যুনালে কোনো অস্বচ্ছতা নেই। তিনি বলেন, “আমি মনে করি না এখানে ক্যাঙারু কোর্টের মতো কিছু আছে। কোনও পক্ষ আমাকে বাধা দেয়নি।”
এ ছাড়াও, কুষ্টিয়ায় ছয়জন হত্যার ঘটনায় আরও চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য প্রসিকিউশন শুনানি শেষ হয়েছে।
প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
রামপুরার ঘটনার প্রভাব স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। পরিবার, প্রতিবেশী এবং মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের মূল দায়িত্ব এবং পুলিশি নিপীড়নের ঘটনার যথাযথ তদন্ত করা প্রয়োজন।
রামপুরার ঘটনার মতো হত্যাকাণ্ড এবং অসংখ্য মানবিক ক্ষতি বিচার ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার সঠিক প্রয়োগের গুরুত্ব আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। মামলার চলমান শুনানি ও ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ন্যায়ের আশ্বাস বহন করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মানবতাবিরোধী ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর তদন্ত, দায়ীদের শাস্তি এবং সামাজিক সচেতনতা অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৯৭৫,Signalbd.com



