খেলা

মিসাইল হামলার মাত্র ২০ মিনিট আগে বিমানে উঠি, দেশে ফিরে স্বস্তিতে রিশাদ

Advertisement

পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) খেলতে গিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছিলেন বাংলাদেশের উদীয়মান লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। কিন্তু ক্রিকেটীয় আলোচনার সেই জায়গাটি দখল করে নেয় ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকট। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই খেলাধুলার সমস্ত আয়োজন বাতিল হয়ে যায়। প্রাণের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সেখান থেকে দেশে ফিরে এসেছেন রিশাদ ও আরেক তরুণ ক্রিকেটার নাহিদ রানা। দেশে ফিরে এসে এক মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন রিশাদ—মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

গত শনিবার বিকেলে ইসলামাবাদ থেকে বিশেষভাবে ভাড়া করা বিমানে দুবাই হয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছান রিশাদ ও নাহিদ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখার পর তারা প্রথমবারের মতো মুখ খুলেন পাকিস্তানে কাটানো ভয়াবহ সেই সময়ের কথা নিয়ে।

যুদ্ধের ছায়ায় পিএসএল

পিএসএলে এবার রিশাদ খেলছিলেন লাহোর কালান্দার্সের হয়ে। অন্যদিকে, তরুণ পেসার নাহিদ রানা ছিলেন পেশোয়ার জালমির স্কোয়াডে। পিএসএলে অংশ নিতে গিয়েই প্রথমদিকে তারা খেলায় মনোযোগ দিতে পারলেও শেষদিকে পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে যায়। কাশ্মীরের পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর থেকেই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শুরু হয় সংঘাত। ভারত পাকিস্তানের কয়েকটি এলাকায় ড্রোন হামলা চালায়। পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তানও। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আইপিএল ও পিএসএল—দুই টুর্নামেন্টই স্থগিত করে দেওয়া হয়।

রিশাদ বলেন, “আমরা যখন দেশ ছাড়ার জন্য বিমানে উঠি, তখন জানতাম না যে মাত্র বিশ মিনিট পরই সেই বিমানবন্দরে মিসাইল হামলা হবে। বিমানের ওড়ার কিছুক্ষণ পরই খবর পাই হামলার, তখন বুঝি আল্লাহর রহমতেই হয়তো প্রাণে বেঁচে গেছি।”

আতঙ্কে কাটানো শেষ দিনগুলো

ইসলামাবাদে কাটানো শেষ দিনগুলোতে কী পরিমাণ আতঙ্কে ছিলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন বলে জানান রিশাদ। তিনি বলেন, “প্রথম যেদিন যুদ্ধের খবর আসল, আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, আর বোধ হয় ফিরে যাওয়া হবে না। সবদিক থেকেই ভয় কাজ করছিল। তবে দেশ থেকে, বিসিবি থেকে ও আমাদের পিএসএলের দল থেকেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। এটাই একটু সাহস দিচ্ছিল।”

বিশেষ করে তরুণ নাহিদের জন্য এটি ছিল এক কঠিন মানসিক ধাক্কা। বয়সে রিশাদের চেয়ে ছোট নাহিদ রানা স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। রিশাদ বলেন, “নাহিদ একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। ওকে আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা একসাথে আছি, আর সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহ তো আছেন। ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না।”

তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডির ম্যাচের ঠিক আগে একটি ড্রোন মাঠে এসে পড়ে। সেই ম্যাচেই খেলার কথা ছিল নাহিদ-রিশাদদের দলের। ভাগ্যিস, ম্যাচটি বাতিল হয়েছিল।

পরিবার ও সহানুভূতির ছোঁয়া

বাইরের দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রিয়জনদের নিয়ে সবসময়ই পরিবারের উদ্বেগ স্বাভাবিক। রিশাদ বলেন, “পরিবার সবসময় টেনশনে ছিল। তাদের চিন্তা কমানোর জন্য ইতিবাচক কথা বলার চেষ্টা করেছি। বলেছি, সব ঠিক আছে, ভালোই আছি।”

এ সময় বিসিবি ও পিএসএলের ম্যানেজমেন্টের ভূমিকাও তুলে ধরেন তিনি। “বিসিবির লোকজন সবসময় খোঁজখবর রেখেছে। একইভাবে পিএসএলের টিম ম্যানেজমেন্টও প্রতিদিন জানতে চেয়েছে আমরা ভালো আছি কি না।”

মাঠে ফিরতে চান রিশাদ

যুদ্ধের কারণে পিএসএল মাঝপথে থেমে গেলেও এখন আলোচনায় রয়েছে এর পুনরায় শুরু। মার্কিন হস্তক্ষেপে আপাতত যুদ্ধবিরতির সম্মত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও খেলা শুরু হতে পারে।

রিশাদ বলেন, “যদি খেলা আবার শুরু হয়, আর যদি তা দুবাইয়ে হয় বা পাকিস্তানেই হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, আমি যেতে রাজি আছি। আমার খেলার ইচ্ছা সবসময়ই আছে। পিএসএলে এখন পর্যন্ত পাঁচটা ম্যাচ খেলেছি, অভিজ্ঞতা খুব ভালো।”

অন্যদিকে, নাহিদের এখনো অভিষেক হয়নি। কিন্তু তাঁর সামনে অনেক সুযোগ আছে বলেই মনে করেন রিশাদ।

তরুণদের জন্য শিক্ষা

এ অভিজ্ঞতা তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য বড় একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে বলেই মনে করেন রিশাদ। “দেশের বাইরে খেলতে গেলে শুধু ক্রিকেট নয়, অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। পরিস্থিতি যেকোনো সময় পাল্টে যেতে পারে। তবে সাহস রাখতে হয়, মনের জোর থাকতে হয়। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে সবকিছু সামলাতে শিখতে হয়।”

ক্রিকেট ছাড়িয়ে বাস্তবতা

এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো, খেলাধুলা যতই মনোমুগ্ধকর হোক, যুদ্ধ বা সংকটের সামনে সেটি খুব ক্ষুদ্র হয়ে যায়। রিশাদ বলেন, “একসময় ক্রিকেটই জীবনের সবকিছু মনে হতো। কিন্তু যখন বুঝলাম একটা মিসাইল ২০ মিনিট দেরিতে পড়লে আমাদের প্রাণ চলে যেতে পারত, তখন বোঝা গেল জীবনের মূল্য কত বেশি।”

পিএসএল ও আইপিএল বন্ধ হওয়ায় শুধু খেলোয়াড়ই নয়, বিপদে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার কর্মীও। টুর্নামেন্টগুলো আবার শুরু হলে অনেকের মুখে হাসি ফিরবে।

উপসংহার

পাকিস্তান থেকে সুস্থ ও নিরাপদে ফিরে এসে এখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন রিশাদ ও নাহিদ। পিএসএল পুনরায় শুরু হলে আবারও যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও, এবার তারা আরও বেশি সতর্ক থাকবেন বলেই জানিয়েছেন।

এই অভিজ্ঞতা হয়তো তাঁদের ক্যারিয়ারের একটি তিক্ত স্মৃতি হয়ে থাকবে, কিন্তু একইসঙ্গে এটি তাঁদের আরও পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে—এমনটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button