
টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে গেছে এবং ১১২৭ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষি ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
নদী পরিস্থিতি ও পানি বৃদ্ধি
তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও, নদীর দুই তীরের অববাহিকায় রোপা আমন, মাসকালাই ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে।
এছাড়াও জেলার খাল, ডোবা ও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তলিয়ে যাওয়া এলাকায় জরুরি সহায়তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ফসল ও কৃষকের ক্ষতি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ১১২৭ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ৯৮৭ হেক্টর, বিভিন্ন শাক-সবজি ১৯১ হেক্টর এবং মাসকালাই ৪৯ হেক্টর জলে তলিয়ে গেছে।
কৃষকরা জানিয়েছে, চলতি বছরে এই ক্ষতির কারণে তাদের জীবনযাত্রা ও আয় মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে রোপা আমন ক্ষতি হলে কৃষকদের জন্য মৌসুমি আয় কমে যাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা জানিয়েছেন, বজরা ও থেতরাই ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, ত্রাণ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, জেলায় ২ হাজার ৫০০ টন শুকনো খাবার, ৪২৪ টন চাল এবং ১৪ লাখ টাকা নগদ মজুদ রয়েছে। তাই আপাতত ত্রাণের জন্য কোন ঘাটতি হবে না।
কুড়িগ্রাম বরাবরই নদী প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বিশেষ করে বর্ষার সময় ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের প্রভাবে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা জেলায় মূলত শাক-সবজি, আমন ধান ও মাসকালাই চাষ হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কৃষি ক্ষতির ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
স্থানীয় প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দ্রুত পানি নিঃসরণ, ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কৃষকদের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে, পানি নেমে যাওয়ার পর বীজ ও কৃষি উপকরণ পুনঃবিতরণ ও নতুন ফসল রোপণের প্রস্তুতি নিতে।
এছাড়া, ভবিষ্যতে নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতর আলোচনা করছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি বছরের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে ঢল সমস্যার মাত্রা আগের চেয়ে বেশি। এর ফলে শুধুমাত্র কৃষি নয়, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে। স্থানীয় কৃষক ও প্রশাসনকে একত্রিতভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “ফসলি জমি নষ্ট হওয়ায় স্থানীয় বাজারে শাক-সবজির দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। কৃষকদের জন্য দ্রুত সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম অপরিহার্য।”
কুড়িগ্রামে পানি বৃদ্ধি ও ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনা স্থানীয় কৃষক ও প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। তবে দ্রুত ত্রাণ ব্যবস্থা, কৃষি সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা সম্ভব।
পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে নদী ভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এম আর এম – ১৬৫৩,Signalbd.com