বিশ্ব

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১০ শিশুসহ ১৫ জন নিহত

Advertisement

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার দেইর আল‑বালাহ অঞ্চলে নারীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের উপর নিখুঁতভাবে আঘাত হানে, ১০ শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত এবং অনেকে গুরুতর আহত হন। ক্ষুধা থেকে মুক্তি পেতে, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি সহায়তা নিতে তারা ভোরে Project HOPE পরিচালিত একটি ক্লিনিকের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় বিস্ফোরণের মুহূর্ত—নির্দোষ মানুষের মধ্যে ঘটে মৃত্যু ও ধ্বংস। বাড়তি তথ্য ও সাক্ষ্য থেকে গঠিত এই প্রতিবেদনে ঘঠনার সমষ্টিগত প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হলো।

হানিকারক হামলার সময় ও প্রেক্ষাপট

  • ঘটনার স্থান ও সময়: ২০২৫ সালের ১০ জুলাই সকালে, দেইর আল‑বালাহ শহরের Altayara সংঘমুখে থাকা Project HOPE‑র ক্লিনিকের বাইরে চরম অবস্থায় থাকা নারীরা ও শিশুরা খাদ্য ও পুষ্টির জন্য অপেক্ষমান ছিল। ক্লিনিক খোলার আগেই সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে, যার ফলে ১৫ জন মারা যান, যার মধ্যে অন্তত ১০ জন শিশু ছিল।
  • আঘাতের প্রকৃতি: সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ক্লিনিকের সামনে হাঁটছিল দুই ব্যক্তি; এরই মধ্যে আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে, ধোঁয়া ও ধুলোর আচ্ছাদনে মৃতদেহ ও আহতদের দেখা যায়। চারপাশে চিৎকার ও কান্নার ধ্বনি, মৃত শিশু ও ঘোরুয়ার গাড়িতে আহতদের শোয়ানো দৃশ্য ফুটেজে ধরা পড়ে।
  • হাসপাতালের দায়িত্বরত বক্তব্য: Project HOPE‑র প্রতিনিধির বক্তব্যে বলা হয়– “স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি নিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের ওপর হামলা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক মানবতাবিদ্রোহ”। ক্লিনিক পরিচালনাকারী সংস্থার দাবি, জোরালোভাবে মনে করিয়ে দেয়: – “গাজায় কেউ নিরাপদ নয়”।

ইমের আল‑নূরি: একজন মায়ের বেদনাময় সতের

৪ সন্তানের পরিবারে অমার ও আমিরের মর্মন্তুদ মৃত্যু

  • পরিবার ও নাম: ৩২ বছর বয়সী ইমান আল‑নূরি তাঁর ১৪ বছর বয়সী খালাতো মেয়ে শামা, ওমর (৯ বছর), আমির (৫ বছর) এবং সিরাজ (২ বছর) একসঙ্গে ক্লিনিকে গিয়েছিলেন। কান্নায় ভেঙে থাকা সিরাজ খাবার চায়—এমন সময় বোন শামা তাকে এবং ওমর ও আমিরকে মারা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
  • অক্সিজেন ও রক্তের সংকট: হামলার পর চিকিৎসা কেন্দ্রের বাইরে গাধার গাড়িতে আহতদের রাখা হয়েছিল। ওমর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়ায় অক্সিজেন সংকটে মারা যায়, আর সিরাজ গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে—তার একটি চোখ নষ্ট‌ হয়ে যায়, মাথায় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ, এবং খুলি ফেটে যায়।
  • ইমানের আশ্রয়হীন আবেদন: তিনি বলেন, ‘ওরা তো শুধুই বাচ্চা ছিল। ওদেরও স্বপ্ন ছিল’—শিশুরা শুধু খেলনা ও মাতৃস্নেহের আশায় জীবিত থেকেছিল। তিনি মিনতি করেন, ‘‘ওকে বাঁচান!’’—সিরাজের শ্বাস চলছেও তার সুরক্ষা নেই।

সাংবাদিকতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

সাক্ষ্য ও ভিডিও ফুটেজ

  • সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যায়িত হয়: দুই ব্যক্তি হাঁটছিল নিচে যারা হামলার কেন্দ্রবিন্দু, আর কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের সামনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভিডিওতে সেটাও দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর আহতরা মাটিতে পড়ে এবং একজন নারী ছোট মেয়ের পাশে বসে চিৎকার করেন, “দয়া করে আমার মেয়ের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠান”—কিন্তু অনেকের জন্য তখন আর কিছুই করার ছিল না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মন্তব্য

  • তারা জানায়, হামলার লক্ষ্য ছিল এক হুমাস সদস্য, যিনি ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামলায় জড়িত ছিলেন। একই সাথে, সেনাবাহিনী দুঃখ প্রকাশ করেছে অসংশ্লিষ্ট মর্টালদের আহত ও নিহত হওয়ার জন্য এবং ঘটনার আবার পর্যালোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন।
  • প্রজেক্ট হোপ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থা বলেন, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের একটি নির্লজ্জ লঙ্ঘন। তারা বলেছে, ‘‘ক্লিনিকটি কোনও সামরিক লক্ষ্য ছিল না’’ এবং শান্তিকালেও এমন হামলা মানবতাবিদ্রোহ।

গাজার সামগ্রিক মানবিক সংকট ও সংঘর্ষের পরিসর

সহায়তার অভাবে মৃত্যু

  • ইউএনরিডব্লিউএ জানিয়েছে, মে মাসের শেষ থেকে প্রায় ৮০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময়, যেখানে নিরাপত্তাহীনতা ও সহায়তার অভাব শিশু ও নারীসহ মানুষকে হত্যা করেছে।

সামরিক অভিযান ও অবরোধ

  • ইসরায়েলের অবরোধ তোলে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের স্তর। মার্চে অবরোধ আরোপ করা হয়, যুদ্ধবিরতিতে অন্তত অংশিক শিথিলতা আসলেও, খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ এখনো সীমাবদ্ধ। হাসপাতালগুলো সংকটের মুখে—ইনকিউবেটর বন্ধ হয়ে গেছে, অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
  • গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই সংঘর্ষে গাজায় ৫৭,০০০+ নিহত হয়েছে, যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। পশ্চিম তীরে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব ও শান্তি সম্ভাবনা

  • যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় সত্তর দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি আলোচনা চলছে। তবে ইসরায়েল চায় হামাস নি:স্ত্রীকরণ ও গাজা থেকে বাহির হয়ে যাওয়ার শর্ত। Hamas মানতে চাইছে না, ফলে চুক্তি অনিশ্চিত। ছক্কাবন্ধিসহ বিভিন্ন শর্ত নিয়ে সংঘর্ষ তীব্র হয়ে উঠছে।
  • সেই প্রসঙ্গে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তায় গাজার জন্য নতুন খাদ্য ও জ্বালানি চুক্তি হয়েছে; তবে বিতর্ক রয়েছে—সবাই একমত নয় যে এই ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট সুরক্ষা ও মানবতাবাদী নীতি বজায় রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষণ ও পাঠকের আবেদন

  • মানবিক বিবেক: নিরস্ত শিশুরা, নারী ও মা শিশুকে খাদ্য নিতে ক্লিনিকের বাইরে দাঁড়িয়েছে—এই মানবিক চিত্র আমাদের বিবেকে প্রশ্ন তোলে যে, বিশ্বের কোথাও এমন মৃত্যু-সাজাল হয়তো আগামীতে অন্য কোথাও রুপান্তরিত হতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: Project HOPE‑র বিবৃতি, রাষ্ট্রগুলোর ক্ষোভ ও জাতিসংঘের উদ্বেগ ঘিরেই এখন প্রশ্ন ওঠে—আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধবিচারের ক্ষেত্রেও কীভাবে ত্রাণসঙ্গঠন, ঘটনা তদন্ত ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা হবে? সেজন্য বিশ্ববাসীকে আরও সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত।
  • Signalbd.com পাঠকদের জন্য বার্তা: আমাদের প্রতিদিনের সংবাদ—লেখন, অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ এমন ভাবে করা উচিত যাতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকে, তথ্যবহুল হয় এবং পাঠকের চেতনা জাগানো হয়। এই প্রতিবেদনের মতো সংবাদ পারিপার্শ্বিকতা বোঝানো, সরকারি তৎপরতা‑অকৃতি তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক আলোকপাত আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে গুরুত্ববোধ তৈরি করে।

সারসংক্ষেপ (Summary)

বিষয়বিবরণ
স্থান ও সময়দেইর আল‑বালাহ, দেকত দিন (১০ জুলাই ২০২৫) সকালে
হাহাকারProject HOPE‑র ক্লিনিকের বাইরে অপেক্ষমাণ নারীর জন্য পুষ্টি ও খাদ্যের লাইনে হামলা
নিহতঅন্তত ১৫ জন, যার মধ্যে ১০ শিশু এবং ২ নারী
আহতআরও বহু, সিরাজ নামে ২ বছরের ছেলে গুরুতর আহত
পরিবারের কষ্টইমান আল‑নূরি ওমর ও আমির হারেন, সিরাজ বাঁচে অথচ মারাত্মক আহত
সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াহামলার উদ্দেশ্য ছিল হামাসের একজন সদস্যকে লক্ষ্য করা; এক্সেসংক্রান্ত তদন্ত চলছে
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াProject HOPE, UN, EU তীব্র নিন্দা ও তদন্ত দাবি
ব্যাপক প্রেক্ষাপটগাজার খাদ্য-বিজ্ঞান সংকট, অবরোধ, ৩৫,০০০+ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে; যুদ্ধবিরতি আলোচনা পিছিয়ে

মানবতার আহ্বান ও সচেতনতা

এই সংবাদটি স্বরূপ, গাজার ঘোর মানবিক সংকট, ক্ষুধার অমানবিকতা ও শিশুশহিদদের মৃত্যুর গল্প তুলে ধরেছে, যেখানে নির্দোষ শিশুরাও হয়েছে আরও একটি বিচ্ছিন্ন ইতিহাসের অংশ। Signalbd.com‑এর কাছে এই প্রতিবেদন পাঠকদের কাছে পৌঁছে—শুধু সংবাদ নয়, মানবতার আহ্বান।

আমাদের কাম্য, বিশ্ববাসী সম্মিলিতভাবে নিরীক্ষা ও সহায়তা বাড়াক, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কার্যকর সিদ্ধান্ত নিক, এবং গাজার যন্ত্রণার বিরুদ্ধে মানবিক পরিব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজি।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button