
ময়মনসিংহের নান্দাইলে প্রবাস ফেরত যুবক মো. আলমগীর হোসেন (৩০) নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে শেরপুর ইউনিয়নের সংগ্রামখেলী গ্রামের বাজারের পাশের বাঁশঝোপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলমগীরের হাত-পা বেঁধে, চোখ উপরে, দাঁত ভেঙে ও শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর মরদেহ বস্তায় ভরে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
ঘটনাস্থলের বিবরণ
নিহত আলমগীর হোসেন শেরপুর ইউনিয়নের সংগ্রামখেলী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি সৌদি আরবে কয়েক বছর কাজ করার পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি কৃষি কাজের পাশাপাশি মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আলমগীরের মাদকবিরোধী অবস্থান ও প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছিল স্থানীয় মাদককারবারের সঙ্গে।
পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে আলমগীর হোসেন নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর শনিবার দুপুরে সংগ্রামখেলী মধ্যবাজারের বাঁশঝোপ থেকে পচা গন্ধ বের হওয়ায় স্থানীয়রা সেখানে গেলে একটি পুঁতে রাখা বস্তায় মরদেহ দেখতে পান। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
হত্যার পদ্ধতি ও নৃশংসতা
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দীন মাহমুদ জানান, আলমগীরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার গলায় প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়, ঘাড় মটকে দেয়া হয় এবং চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। হাত-পা বাঁধা ছিল। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে, এটি কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
পরিবার ও স্থানীয়দের বক্তব্য
নিহতের মা মনোয়ারা বেগম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১১ জনকে নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাতপরিচয় ৪–৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহতের ভাবি সাদিয়া আক্তার বলেন, “আমার দেবর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। এজন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।”
স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন যে, আলমগীরের সাহসী মনোভাব ও মাদকবিরোধী কার্যক্রমের কারণে তিনি মাদক কারবারিদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকায় শোক এবং উদ্বেগের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশি অভিযান ও গ্রেফতার
পুলিশ শনিবার রাতে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর একতা বাজার থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইমাম হোসেন ওরফে রতন (৩৩) নামে একজনকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
ওসি খন্দকার জালাল উদ্দীন মাহমুদ বলেন, “গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার না করলেও তদন্তে আমরা তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
মরদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয় মানুষ ও সামাজিক মাধ্যমে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এই হত্যাকাণ্ড সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রবাস ফেরত যুবকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের কাজ ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করলেও নিরাপত্তার অভাবে ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী প্রক্রিয়া
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নিহতের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন ও হত্যার প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মাদকের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়া প্রবাস ফেরত আলমগীর হোসেনের নৃশংস মৃত্যু শুধুমাত্র তার পরিবার নয়, পুরো সমাজকে শোকগ্রস্ত করেছে। এই হত্যাকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা ও মাদকবিরোধী প্রচেষ্টার উপর নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং শিক্ষামূলক প্রচারণার মাধ্যমে যুবসমাজকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্রভাবে সামনে এসেছে।
এম আর এম – ১৫৫৮,Signalbd.com