
সৌদি আরবে গত এক সপ্তাহে অবৈধ বসবাস এবং শ্রম আইনসহ সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২২ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে আরব নিউজের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
অবৈধ বসবাস ও আইন লঙ্ঘনের বিস্তারিত
৩১ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত চলা এক ধারাবাহিক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী এসব প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৮৩৩ জনকে বসবাস সংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৪ হাজার ৬২৪ জন এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩ হাজার ৬১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ১ হাজার ৬৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ইয়েমেনি এবং ৬৪ শতাংশ ইথিওপিয়ার নাগরিক। নিরাপত্তা বাহিনী ৪৮ জনকে অবৈধভাবে সৌদি ত্যাগের চেষ্টা করার অপরাধে আটক করেছে।
সৌদি আরবে অপরাধীদের বর্তমান অবস্থান ও শাস্তি
বর্তমানে সৌদিতে মোট ২৩ হাজার ৬৩০ জন অপরাধী আটক রয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬০১ জন পুরুষ এবং ৩ হাজার ২৯ জন নারী। এসব অপরাধীদের মধ্যে ১৬ হাজার ১৬২ জনকে তাদের নিজ নিজ দেশের কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হয়েছে ভ্রমণ নথিপত্র সংগ্রহের জন্য। এছাড়া ৩ হাজার ১৩৬ জন বর্তমানে ভ্রমণ বুকিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে, এবং ১১ হাজার ৫৮ জনকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে।
সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবৈধ প্রবেশ, পরিবহন, আশ্রয় বা আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ১০ লাখ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা, অপরাধে ব্যবহৃত যানবাহন বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং জনসাধারণের নামকরণের শাস্তি রয়েছে।
অবৈধ প্রবেশ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতির পেছনের কারণ
সৌদিতে হাজার হাজার প্রবাসী অবৈধভাবে অবস্থান করছে প্রধানত ভাল বেতনের কাজ ও জীবনের উন্নত মানের আশায়। তবে কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কঠোর শ্রম আইন বিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক বছর ধরে সৌদি সরকার বিশেষ অভিযান চালিয়ে আসছে।
এর ফলে অনেক সময় ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রবাসীরা দেশে ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করে, যা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শ্রমিক ও বসবাস আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের জন্যও অভিযান চলছে।
প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের পদক্ষেপ ও পরামর্শ
সৌদি আরব সরকার নিয়মিত প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছে যাতে প্রবাসীরা বৈধ ভিসা ও শ্রম আইনের আওতায় কাজ ও বসবাস নিশ্চিত করে। এছাড়া তাদের নিজ নিজ দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোও নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে প্রবাসীদের সচেতন করার জন্য।
সরকারি পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তারা দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যান বা বৈধভাবে ভিসা নবায়ন করুন। পাশাপাশি অবৈধ কাজ বা বাসস্থান থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশিসহ অন্যান্য প্রবাসীদের ওপর এই ধরণের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কার কার্যক্রমের সরাসরি প্রভাব পড়ছে। বিশেষত যারা ভিসা নবায়ন করতে পারেননি বা বৈধ কাগজপত্র বিহীন অবস্থায় রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে উদ্বেগ বাড়ছে।
বাংলাদেশি প্রবাসী সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকার ও সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা প্রবাসীদের প্রতি যথাযথ মানবিক আচরণ এবং দ্রুত প্রক্রিয়ায় বৈধ কাগজপত্র পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।
ভবিষ্যতে সম্ভাব্য প্রভাব ও দিকনির্দেশনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাময়িক হলেও প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ধরণের অভিযান প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশসহ প্রবাসী দেশগুলোর কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্বকে আরও শক্তিশালী করে প্রবাসীদের কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা বৈধভাবে কাজ ও বসবাস করতে পারে এবং অবৈধতা থেকে বিরত থাকে।
এম আর এম – ০৭৯৫, Signalbd.com