জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর

বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ৮ অক্টোবর থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করে কার্যক্রম শুরু হবে এবং ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।
নির্বাচন রোডম্যাপের বিস্তারিত
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন আগামী ৮ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করবে। কমিশন প্রথমে ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচনের আচরণবিধি ও নীতিমালা চূড়ান্ত করবে। এরপর ধাপে ধাপে মনোনয়নপত্র বিতরণ, জমা, যাচাই-বাছাই এবং আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হবে। নির্দিষ্ট সময়ের প্রচারণা শেষে ২৭ নভেম্বর ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোটের দিনই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
জকসু নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর মতো ছাত্রসংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে কখনো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বমূলক প্ল্যাটফর্মের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। প্রশাসন বলছে, সংবিধি ও বিধি অনুযায়ী ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
রোডম্যাপ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ। তারা নিজেদের দাবি-দাওয়া ও ক্যাম্পাসের উন্নয়নের বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। তবে কিছু শিক্ষার্থী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বহিরাগত হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।
সংখ্যার পরিসংখ্যান ও তুলনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে, দীর্ঘ ২৮ বছর পর। সেখানে প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী ভোটার ছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। ফলে প্রথমবারের মতো একটি বড় ভোটারগোষ্ঠী এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এটি ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এটি শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাই করবে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিও শক্তিশালী করবে। তারা মনে করেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবেন।
প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হতে যাচ্ছে। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে এটি শুধু শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই নয়, দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া কতটা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়।
এম আর এম – ১৩৮৯,Signalbd.com