আঞ্চলিক

টিকটকের পরিচয়ে প্রেম, মাদারীপুরে এসে বিয়ে করলেন চীনা যুবক

মাদারীপুরে চার মাসের অনলাইন প্রেমের সম্পর্ক শেষে চীনের শি তিয়ানজি নামের এক যুবক ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে। স্থানীয় সুমাইয়া আক্তার নামের এক তরুণীর সঙ্গে মুসলিম শরিয়ত অনুযায়ী তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই।

প্রেমের সূত্রপাত টিকটকে

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকের মাধ্যমে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় চীনা নাগরিক শি তিয়ানজির। প্রথমে ভিডিও কনটেন্ট দেখা থেকে শুরু হয় তাদের কথোপকথন। ধীরে ধীরে উইচ্যাটে নিয়মিত যোগাযোগের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।

শুধু অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তারা। প্রতিদিনের কথোপকথন, ছবি এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। এরপর তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশে এসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন

২৪ জুলাই শি তিয়ানজি বাংলাদেশে আসেন। তিন দিন পর ২৭ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের মহিসেরচর গ্রামে সুমাইয়ার বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। প্রথমে আদালতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর মুসলিম শরিয়ত অনুযায়ী কাবিনের মাধ্যমে এই দম্পতি একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন।

বিয়ের পর পরিবার এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আয়োজন করা হয় ছোট পরিসরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। গ্রামীণ পরিবেশে ভিন্ন সংস্কৃতির এ বিবাহ অনুষ্ঠান এলাকাবাসীর কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

কে এই সুমাইয়া আক্তার?

সুমাইয়া আক্তার মাদারীপুর সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা সাইদুর রহমান স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন ব্যক্তি। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক মাধ্যমে আগ্রহী সুমাইয়া পড়াশোনার পাশাপাশি ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতেন। সেই সূত্রেই চীনা তরুণ শি তিয়ানজির সঙ্গে তার পরিচয়।

প্রেমের জন্য ভাষা শিখলেন সুমাইয়া

সুমাইয়া জানিয়েছেন, সম্পর্কের গভীরতায় তিনি চীনা ভাষা শেখা শুরু করেন। প্রতিদিন অনলাইন ক্লাস ও ইউটিউবের মাধ্যমে প্রাথমিক চীনা ভাষা শিখেছেন তিনি। তার আশা, স্বামীর সঙ্গে চীনে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও নতুন জীবন শুরু করবেন।

তিনি বলেন, “শি আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার জন্য হাজার মাইল দূরের দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। পরিবারও আমাকে এই সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছে।”

বাংলাদেশের গরমে অবাক চীনা যুবক

বিয়ের পর শি তিয়ানজি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “সুমাইয়াকে ভালোবেসেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। সে খুব ভালো মেয়ে। বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। তবে এখানকার আবহাওয়া আমার কাছে বেশ গরম মনে হয়েছে। ভবিষ্যতে আমি তাকে নিয়ে চীনে ফিরব।”

পরিবারের প্রতিক্রিয়া

সুমাইয়ার বাবা সাইদুর রহমান বলেন, “আমার মেয়ে যখন আমাদের সব কথা খোলামেলা জানায়, তখন আমরা ভেবে দেখেছি। ছেলে বাংলাদেশে এলে আমি নিজেই ঢাকা থেকে তাকে নিয়ে এসেছি এবং পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিয়ে দিয়েছি। আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তারা যেন সুখে থাকে।”

স্থানীয়দের আগ্রহ ও প্রতিক্রিয়া

এই অনন্য ভালোবাসার গল্প নিয়ে মহিসেরচর গ্রামে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই বলেন, ডিজিটাল যুগে আন্তর্জাতিক প্রেম নতুন কিছু নয়, কিন্তু বিদেশি যুবক প্রেমিকার জন্য বাংলাদেশে এসে মুসলিম রীতিতে বিয়ে করবে — এটি তাদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

বিয়ের পর আপাতত বাংলাদেশেই কয়েক সপ্তাহ থাকার পরিকল্পনা রয়েছে শি তিয়ানজির। এরপর সুমাইয়াকে নিয়ে চীনে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই নবদম্পতির সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য শুভকামনা জানানো হয়েছে।

অনলাইন প্রেম থেকে বাস্তব জীবনে

ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে ওঠার ঘটনা এখন আর নতুন নয়। তবে বিদেশ থেকে এত দূর এসে মুসলিম ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে করার ঘটনা সমাজে ইতিবাচক বার্তা দেয় যে, আন্তরিক ভালোবাসা জাতি, ধর্ম ও দেশের সীমারেখাকে অতিক্রম করতে পারে।

চীনের শি তিয়ানজি এবং মাদারীপুরের সুমাইয়া আক্তারের এই অনলাইন প্রেমের গল্প বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ভালোবাসার টানে শুরু হওয়া এই সম্পর্ক বিয়েতে রূপ নিয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে এক ভিন্ন মাত্রার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই নতুন দম্পতির বৈবাহিক জীবন কেমনভাবে এগিয়ে যায়।

এম আর এম – ০৫৯৮ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button