আঞ্চলিক

প্রবাসীর স্ত্রীর একসঙ্গে ৬ সন্তান জন্ম, অবাক চিকিৎসকরা!

Advertisement

রোববার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ২৩ বছর বয়সী মোকসেদা আক্তার একসঙ্গে তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তানের জন্ম দেন। প্রায় ২৭ সপ্তাহের গর্ভধারণের পর নবজাতকরা জন্ম নেয়ায় ওজন কম হওয়ায় তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। জন্মের পরপরই একজন নবজাতক মৃত্যুবরণ করেছে।

মোকসেদার স্বামী মো. হানিফ কাতার প্রবাসী। এর আগে দম্পতির একটি সন্তান জন্মের তিন দিন পর মারা গিয়েছিল।

প্রসবের বিস্তারিত

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা শারমিন জানান, “নবজাতকরা অপরিপক্ব অবস্থায় জন্ম নিয়েছে। তাদের ওজন ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের মধ্যে। এই কারণে সবাইকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছে।”

চিকিৎসকরা আরও জানান, হাসপাতালের পর্যাপ্ত শয্যা না থাকার কারণে তিন নবজাতককে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। শয্যা খালি হলে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে।

মোকসেদার বড় বোন লিপি বেগম বলেন, “মোকসেদা ৯ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আমাদের বাসায় আসেন। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও রাতের দিকে প্রসববেদনা শুরু হওয়ায় ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”

মোকসেদার গর্ভধারণের সময় স্থানীয় হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে জানা যায় যে গর্ভে ছয়টি শিশু রয়েছে। ২৭ সপ্তাহের মাথায় জন্ম হওয়ায় নবজাতকরা অপরিপক্ব।

চিকিৎসকরা জানান, এই ধরনের বহুমূত্রী প্রসব অত্যন্ত বিরল এবং বিপদজনক। বিশেষ করে ছোট ওজনের নবজাতকরা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

চিকিৎসা ও পরিচর্যা

ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, “নবজাতকরা অপরিপক্ব হওয়ায় বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন। আমাদের এনআইসিইউতে তিনটি শয্যা ফাঁকা থাকায় তিনজনকে রাখা হয়েছে। বাকি তিনজনকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন দুই নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

চিকিৎসকরা শিশুদের শারীরিক তাপমাত্রা, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং খাবারের প্রতিক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিবারকে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

পরিবার এবং চিকিৎসকরা মিলিতভাবে নবজাতকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরনের বহুমূত্রী প্রসব সংবাদ শিরোনামে এসেছে।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মোকসেদা একাধিকবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন এবং তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। নবজাতকদের ত্বক, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বহুমূত্রী প্রসব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ সন্তান একসঙ্গে জন্ম নেওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা। বিশেষত, ২৭ সপ্তাহের সময় নবজাতকরা জন্ম নেওয়ার কারণে এ ধরনের প্রসব চ্যালেঞ্জিং।

একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রথম কয়েক সপ্তাহে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন না করলে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে আধুনিক চিকিৎসা এবং এনআইসিইউ সুবিধা থাকায় তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”

মোকসেদা আক্তারের একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবার এবং চিকিৎসা সম্প্রদায়ের জন্য বিস্ময়কর ঘটনা। জন্মের সময় নবজাতকদের ওজন কম হওয়ায় তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও চিকিৎসকরা তাদের নিরাপদ রাখার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন। পরিবার এবং চিকিৎসকরা আশা করছেন, স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে চললে নবজাতকরা সুস্থভাবে বড় হবে।

এম আর এম – ১৩৩৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button