নাটোরে বাস-ট্রাক তল্লাশি: বিপুল পরিমাণ গাঁজা জব্দ

নাটোরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) একটি বড় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। ভোরে শহরের বনবেলঘরিয়া এলাকায় দুটি পৃথক অভিযানে একটি যাত্রীবাহী বাস এবং একটি ট্রাক থেকে মোট ১৭৪ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। এ সময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল জেলার সীমান্ত এলাকায় মাদক পরিবহণের চ্যানেলগুলো বন্ধ করা। জেলা পুলিশ সুপার (ডিএসপি) তারিকুল ইসলাম জানান, এই অভিযানটি সম্পূর্ণ সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে।
প্রথম অভিযান: বাস তল্লাশি
রোববার ভোরে নোয়াখালী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ‘গ্রামীণ ট্রাভেলস’ নামে একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। বাসটির যাত্রী সিটের নিচে রাখা দুটি বস্তা থেকে মোট ১৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় বাসে থাকা দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন:
১. মো. ওয়াদুদ আলী, ২৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ভগরইল এলাকার বাসিন্দা।
২. মো. ফসের আলী সোহেল, ২৯, শিবগঞ্জ উপজেলার কয়লার দিয়ার এলাকার বাসিন্দা।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
দ্বিতীয় অভিযান: ট্রাক তল্লাশি
প্রথম অভিযানের কয়েক ঘন্টা পর, একই এলাকায় নারায়গঞ্জ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি প্লাস্টিক ক্যারেট বহনকারী ট্রাক থামানো হয়। ট্রাকের তল্লাশিতে ছয়টি চটের বস্তার নিচে রাখা ১৬০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ সময় ট্রাকের চালকসহ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন:
১. মো. লালন, ২৫, শেখটোলা কাশিবাটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
২. মো. সাবেরুল ইসলাম শহিদ, ৩৫, একই এলাকার বাসিন্দা।
ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা জানান, ট্রাকে থাকা গাঁজার পরিমাণ দিয়ে বোঝা যায় যে এটি বড় পরিসরের মাদক চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং বড় ধরনের মাদক কারবারের সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে।
জেলা পুলিশের নীতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। জেলা জুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। জনগণ যেন নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে, তা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে এবং সীমান্ত এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি, মাদক পাচারকারীদের শনাক্তকরণের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণও ত্বরান্বিত করা হবে।
নাটোরে মাদক পরিস্থিতি ও জনমত
নাটোর জেলা মাদকমুক্ত করতে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালনা করে আসছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদক চক্র ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে, তবে জেলা পুলিশের নিয়মিত তল্লাশি ও অভিযান জনমতকে উৎসাহিত করছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, এই ধরনের অভিযান সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মহিলা ও শিক্ষার্থীদের ওপর মাদকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যালয়, কলেজ ও মসজিদ-সদরের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মাদক উদ্ধার অভিযান
বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে বড় ধরনের মাদক উদ্ধার হচ্ছে। বিশেষ করে বাস, ট্রাক ও কনটেইনারে গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইন বহন করার ঘটনা বাড়ছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে পুলিশ ও ডিবি মিলিয়ে কয়েকশো কেজি গাঁজা, লক্ষাধিক পিস ইয়াবা এবং বিভিন্ন ধরনের অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।
এ ধরণের অভিযান শুধু নাটোরেই নয়, সারাদেশে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর হচ্ছে।
ডিবি পুলিশের অভিযান কৌশল
ডিবি পুলিশ বলেন, মাদক চক্র মূলত সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় থাকে। এই কারণে সীমান্তে নজরদারি, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, সড়কপথে চেকপোস্ট স্থাপন এবং পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত অভিযান মূল কৌশল।
এছাড়া, পুলিশ ই-সিসি ও সিসিটিভি ফিড পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্য মাদক পরিবহন চ্যানেল চিহ্নিত করছে।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হবে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত গাঁজার বাজারমূল্য কয়েক লাখ টাকা হতে পারে।
এছাড়া, তদন্ত চলছে, যাতে জানা যায় এই গাঁজা কোন চক্রের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছিল এবং এর যোগসাজশে আরও কারা জড়িত।
জনগণের নিরাপত্তা ও সচেতনতা
নাটোরে মাদকবিরোধী অভিযান শুধুমাত্র গ্রেফতার ও জব্দে সীমাবদ্ধ নয়। জেলা পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সচেতন করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
বিদ্যালয়, কলেজ, মসজিদ, ক্লাব ও সামাজিক সংগঠন মিলিয়ে সচেতনতা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে যুবকদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখার জন্য প্রশিক্ষণ ও সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে।
মাদক প্রতিরোধে সামাজিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ
নাটোর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে “মাদকমুক্ত নাটোর” কর্মসূচি চালু রয়েছে। এর আওতায় নিম্নলিখিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে:
১. সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল এবং চেকপোস্ট স্থাপন।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও যুবসংগঠনে মাদক সচেতনতা কর্মসূচি।
৩. স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচারণা।
৪. গ্রাম, মহল্লা এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বিত মাদকবিরোধী অভিযান।
এ ধরনের উদ্যোগ মাদকবিরোধী যুদ্ধে স্থানীয় জনগণকে আরও সক্রিয় করছে।
সার্বিক প্রভাব
নাটোরে এই ধরনের অভিযান স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে। এটি মাদকচক্রকে প্রভাবিত করছে এবং সতর্ক করছে।
সর্বশেষ তদন্ত অনুযায়ী, জেলা পুলিশ আশা করছে, এই ধরনের অভিযান আরও জোরদার হবে এবং জেলার মাদক প্রবণতা কমে যাবে।
নাটোরে দুইটি অভিযানেই মোট ১৭৪ কেজি গাঁজা জব্দ এবং চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ মানুষ নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারবে এবং মাদক চক্র নির্মূল করতে জেলা পুলিশ কঠোর ভূমিকা পালন করবে।
নাটোরের এই অভিযানের ঘটনা দেশের অন্যান্য জেলার মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে মিল রেখে, একটি প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে যে, প্রশাসন ও পুলিশ মাদক নির্মূলের জন্য সচেতন ও সক্রিয়। জনগণও এই প্রচেষ্টার সাথে সমন্বিতভাবে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
MAH – 12810 Signalbd.com