আঞ্চলিক

কক্সবাজারে স্বামীকে খুন করে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ঘাতক আটক

কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নে এক হৃদয়বিদারক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনতা ঘাতককে আটক করে পুলিশকে তুলে দিয়েছে। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে উত্তরন আবাসিক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে, যা কক্সবাজারবাসীকে শোক ও আতঙ্কে ছুঁয়ে দিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটি জেলার মৃত ব্যক্তির স্বামী রঞ্জন চাকমা ও ঘাতক বিরেল চাকমার মধ্যে পূর্বের কোনো বিরোধ ছিল। বিরেল চাকমা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের উত্তরন আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন।

ঘটনা কীভাবে ঘটলো

পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, বিরেল চাকমা (৫৫) এবং রঞ্জন চাকমা একত্রে মদ্যপান করছিলেন। ওই সময় রঞ্জন চাকমার স্ত্রীকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলায় তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে বিরেল চাকমা ধারালো দা দিয়ে রঞ্জনের মাথায় আঘাত করে তাকে খুন করে। খুনের পর তিনি রঞ্জনের স্ত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।

স্থানীয়রা জানান, নিহত রঞ্জন চাকমা এবং ঘাতক বিরেল চাকমার বাড়ি রাঙ্গামাটিতে। হত্যাকাণ্ডের পর ব্যবহারকৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। রঞ্জনের স্ত্রী কৌশলে বাইরে বের হয়ে স্থানীয়দের খবর দিলে, স্থানীয়রা ঘাতককে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেন।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। বিরেল চাকমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট নিয়ে তদন্ত চলছে।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘটনাস্থল ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের নৃশংস ঘটনা কক্সবাজারের মতো শান্তিপ্রিয় এলাকায় অপ্রত্যাশিত। স্থানীয়রা ঘাতককে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এতদিন ধরে আমরা এখানে শান্তিতে বসবাস করছিলাম। এমন নৃশংস ঘটনা কল্পনাও করা যায়নি। পুলিশ যেন দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে।”

আইনগত দিক ও তদন্ত প্রক্রিয়া

আইনমন্ত্রক ও স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এই ধরনের অপরাধে সরাসরি হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণ আইনের আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ধারা ৩২০ ও ৩২১ অনুযায়ী হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে দণ্ড আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা দীর্ঘকালীন কারাদণ্ড।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক স্বীকার করেছেন যে তিনি রঞ্জন চাকমার স্ত্রীর প্রতি দীর্ঘদিন ধরে অশ্লীল মনোভাব পোষণ করছিলেন। তবে হত্যার পরিকল্পনা তার আগেই ছিল কিনা, তা তদন্তের বিষয়।

সামাজিক প্রেক্ষাপট

কক্সবাজার জেলা সাধারণত পর্যটকদের জন্য বিখ্যাত। এখানে সুনীল সমুদ্র সৈকত, পর্যটনকেন্দ্র ও প্রকৃতির সৌন্দর্য রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা স্থানীয় সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। বিশেষত নারী নির্যাতন ও গৃহস্থলী হত্যাকাণ্ড সামাজিক সচেতনতার জন্য সতর্কবার্তা।

এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। সমাজের সচেতন অংশের মতে, “নারী ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ অপরিহার্য।”

মৃত্যুর পর পরিবার ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

নিহত রঞ্জন চাকমার পরিবার গভীর শোকাহত। নিহতের ছেলে-মেয়েরা বর্তমানে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “এমন নৃশংসতা পরিবারকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। আমাদের আশা, আইন দ্রুত কার্যকর হবে।”

নিহতের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং আশ্বাস দিয়েছে যে ঘাতককে দ্রুত বিচারের জন্য আদালতে পাঠানো হবে।

সুরক্ষা ও পরামর্শ

স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তারা বলছেন, “পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, গৃহস্থলী সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবারিক পরামর্শ এবং স্থানীয় কমিউনিটির তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে গৃহস্থলী হত্যাকাণ্ড ও নারী নির্যাতনের ঘটনা মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনামে আসে। সম্প্রতি অন্যান্য জেলার ঘটনার মতো কক্সবাজারের এই নৃশংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে নারীর নিরাপত্তা এবং আইনের দ্রুততা নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়েছে।

ঘাতক বিরেল চাকমার গ্রেফতারের ঘটনা কক্সবাজারবাসীকে কিছুটা নিশ্চয়তা দিচ্ছে, কিন্তু ক্ষত গভীর। পরিবার ও স্থানীয়রা আশা করছেন, আইনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায়বিচার হবে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

MAH – 12808  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button