আঞ্চলিক

দেশের ৪ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের কয়েকটি প্রধান নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস ও প্রভাব

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম অঞ্চলেও একই ধরনের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলে বৃষ্টির কারণে সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে, যা বাংলাদেশের নদ-নদীতেও সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বর্তমানে তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন দিনে এই নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের তিস্তা ও দুধকুমার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

অন্যদিকে ধরলা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল থাকলেও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এর পানিও দ্রুত বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর অবস্থা

গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যমুনা নদীর পানি এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী চার দিনে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ধীরে ধীরে বাড়বে। যদিও পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি পুরোপুরি এড়ানো যাচ্ছে না।

সুরমা-কুশিয়ারা ও উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য নদীর পরিস্থিতি

সিলেট অঞ্চলের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ইতিমধ্যে বেড়েছে। আগামী তিন দিনে এসব নদীর পানি আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলের আত্রাই, করতোয়া, পুনর্ভবা ও ঘাঘট নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাঙ্গন নদীর পানি যদিও কিছুটা কমেছে, তবে আশঙ্কা রয়েছে বৃষ্টির কারণে আবারও তা বাড়তে পারে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীগুলো

চট্টগ্রাম বিভাগের সাঙ্গু নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা ও মাতামুহুরী নদীর পানির স্তর কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন দিনে এসব নদীর পানি পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলও আংশিকভাবে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বন্যার সম্ভাব্য প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আগামী তিন দিন ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে, তবে চার জেলার পাশাপাশি সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের কিছু অংশেও জলাবদ্ধতা ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কৃষিজমি, মাছের ঘের ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্কুল-কলেজেও পাঠদান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়দের উদ্বেগ ও প্রশাসনের প্রস্তুতি

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন ইতোমধ্যেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ক্ষতি কমাতে উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

পরিবেশবিদরা বলছেন, হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি দ্রুত বেড়ে গেলে প্রস্তুতি না থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই তারা আগেভাগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আগামী ৭২ ঘণ্টায় পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ওপর। তবে সতর্কতা জারি থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে পারলে সম্ভাব্য ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। এখন সবার দৃষ্টি বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের পরবর্তী আপডেটের দিকে।

এম আর এম – ১৩১০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button