আঞ্চলিক

আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হলো প্রায় ৯ হাজার টাকায়

পটুয়াখালীর আলীপুর মৎস্য আড়তে বৃহস্পতিবার দুপুরে আড়াই কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ নিলামে বিক্রি হয় প্রায় ৯ হাজার টাকায়। বিরল এই বড়সড় ইলিশ দেখে বাজারজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়, আর ক্রেতারা প্রতিযোগিতা করে দাম হাঁকেন।

ঘটনাটির বিস্তারিত

পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে আড়াই কেজি ওজনের এক বিশাল ইলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাছটি আলীপুর মৎস্য আড়তে নিয়ে আসা হলে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজির দাম ধরা হয়েছিল গড়ে ৩ হাজার ৫৫০ টাকা। সেই হিসাবে মাছটির দাম দাঁড়ায় ৮ হাজার ৭৫০ টাকা। শেষ পর্যন্ত এক মৎস্য ব্যবসায়ী মাছটি কিনে নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারে মাছটি আনার পরেই চারদিক থেকে মানুষ ভিড় করতে থাকে। এত বড় ইলিশ সচরাচর দেখা যায় না, বিশেষ করে মৌসুমের এই সময়ে। ফলে দামটিও সাধারণ বাজারমূল্যের চেয়ে বেশ কিছুটা বেশি হয়।

বাংলাদেশে ইলিশ মাছকে জাতীয় মাছ হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর বর্ষা এবং শরৎ মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়ে সবচেয়ে বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আকারে বড় ইলিশ খুব কম দেখা যায়। নদী ও সাগরে অতিরিক্ত মাছ ধরা, জাটকা নিধন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বড় ইলিশের সংখ্যা কমে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগরে বড় ইলিশ ধরা পড়ার খবর ক্রমশ বাড়ছে। এর আগে গেল আগস্ট মাসেও বরিশাল ও ভোলার নদীপথে দুই কেজির ওপরে বেশ কয়েকটি ইলিশ ধরা পড়ে, যা নিয়ে স্থানীয় বাজারে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।

বাজারের প্রতিক্রিয়া

আলীপুর বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মতে, বড় ইলিশ বাজারে আসা মানেই অন্য রকম আনন্দ। একদিকে মাছপ্রেমীরা আনন্দ পান, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের সুযোগ পান।

এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, “এত বড় ইলিশ এখন সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই আমি নিলামে কিছুটা বেশি দামে কিনেছি। পরে মাছটি ঢাকার এক পরিবারের জন্য পাঠানো হয়েছে। তারা বিশেষ অনুষ্ঠানে এটি রান্না করবেন।”

অন্যদিকে স্থানীয় ক্রেতারা জানান, তারা চাইলে মাছটি কিনতে পারতেন না। কারণ সাধারণ পরিবারের নাগালের বাইরে এ ধরনের দামের মাছ।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

বাংলাদেশে সাধারণত ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশই বেশি দেখা যায়। বাজারে এই ইলিশের দাম সাধারণত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। কিন্তু যখন আকারে ২ কেজির ওপরে ইলিশ বাজারে আসে, তখন তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয় এবং দামও দ্বিগুণ কিংবা ত্রিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বড় ইলিশের (২ কেজির ওপরে) সংখ্যা কমলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, “এ ধরনের বড় ইলিশ ধরা পড়া আসলে আমাদের জন্য ইতিবাচক বার্তা। এটি প্রমাণ করে যে সাগরে মাছের প্রজনন বেড়েছে। জেলেরা এখন আবার বড় ইলিশ পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।”

তিনি আরও জানান, সরকার যে সময়মতো ইলিশ প্রজননকালীন সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, এর ফলেই বড় মাছের সংখ্যা কিছুটা হলেও বেড়েছে। যদি এই উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে বজায় থাকে, তবে আগামী কয়েক বছরে বাজারে আরও বড় আকারের ইলিশ পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

পরিশেষে

আড়াই কেজি ওজনের একটি ইলিশ প্রায় ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, বাংলাদেশিদের কাছে ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়, বরং আবেগ ও গৌরবের প্রতীক। বড় ইলিশ ধরা পড়া কেবল জেলেদের আনন্দই আনে না, দেশের বাজারেও এক ধরনের উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায় — ভবিষ্যতে কি আমরা নিয়মিত এ ধরনের বড় ইলিশ দেখতে পাব, নাকি এ বিরল দৃশ্যই থেকে যাবে বিশেষ মুহূর্তের জন্য?

এম আর এম – ১২৮৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button