আঞ্চলিক

ঘুষ নেয়ার অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএ’র ২ কর্মকর্তা বরখাস্ত

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর দুই কর্মকর্তাকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী আরিফ বিল্লাহর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়।

বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন— বিআইডব্লিউটিএ নৌসংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (মেরিন) মো. আব্দুর রহিম এবং উপপরিচালক মো. ওবায়দুল করিম খান।

অভিযোগের বিবরণ

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের জ্বালানি তেলের ঠিকাদারি কাজ দিতে গিয়ে উভয় কর্মকর্তা উৎকোচ (ঘুষ) লেনদেনের অভিযোগে জড়িত ছিলেন। এই ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নজরে আসার পর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, অন্যরা যারা ঘুষ লেনদেনে জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপ

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত থাকবে। কমিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে এবং প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একজন কর্মকর্তা জানান, “এই ধরনের অভিযোগ তৎকালীন সরকারের দায়িত্বশীলতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার প্রমাণ। এটি পরবর্তীতে অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সতর্ক করবে।”

বাংলাদেশে সরকারি কর্মকাণ্ডে ঘুষ এবং অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। বিগত কয়েক বছরে নৌপরিবহন খাতেও নানা ধরনের অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে ঠিকাদারি ও জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মাঝে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ প্রায়ই সামনে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাময়িক বরখাস্তের মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা প্রদর্শনের পাশাপাশি সতর্কতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ঘুষের ঘটনায় কর্মকর্তাদের বরখাস্ত এবং তদন্ত শুরু হওয়ায় সাধারণ জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট খাতের কর্মীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

একজন অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে অনিয়মের সংখ্যা কমে যাবে।”

অন্যদিকে, কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার মন্তব্য করেছেন, “এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত হয়, কিন্তু পদক্ষেপ নেওয়ায় স্বচ্ছতার বার্তা যাচ্ছে।”

বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সরকারের শুদ্ধ প্রশাসনের প্রচেষ্টার অংশ।

একজন প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ বলেন, “ঘুষ লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। এটি ভবিষ্যতে অন্যদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।”

অর্থনীতিবিদরা জানান, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম কমানোর জন্য এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা মনে করেন, নিয়মিত নজরদারি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হলে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

পরবর্তী ধাপ

নির্বাহী কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি দুই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করবে। দোষ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঘুষ লেনদেনে জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযোগ এড়িয়ে চলতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও নীতি-নির্ধারণ কার্যক্রম চালানো হবে।

পরিশেষে

বিআইডব্লিউটিএ’র দুই কর্মকর্তাকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত করা একদিকে প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদিকে, এটি সরকারি খাতে সতর্কতা বৃদ্ধি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের প্রমাণ। সাধারণ জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি এখন তদন্তের ফলাফলের দিকে।

এম আর এম – ১২৭৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button