কক্সবাজারে সাংবাদিকের ঝুলন্ত লাশ, ছড়িয়ে পড়েছে ওসিকে দায়ী করা ভিডিও

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঝাউগাছ থেকে উদ্ধার হলো তরুণ সাংবাদিক আমিন উল্লাহর (২৩) ঝুলন্ত লাশ। আমিন উল্লাহ উখিয়া থানার পালংখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা এবং দৈনিক “আমার প্রাণের বাংলাদেশ” পত্রিকার উখিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আমিন উল্লাহ আত্মহত্যার জন্য তৎকালীন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে দায়ী করেছেন।
ঘটনার বিবরণ
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ সৈকতের ঝাউগাছ থেকে লাশ উদ্ধার করে। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। লাশের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী একটি বাসের টিকিট পাওয়া গেছে, যাতে সময় লেখা ছিল বুধবার রাত ৯টা ২০ মিনিট। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আমিন উল্লাহ অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই গভীর রাতে পুলিশ তার বাড়িতে গিয়েছিল। এছাড়া কয়েক দিন আগে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের মিছিলে যাওয়ার অভিযোগে তার ছোট ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
ভিডিওর বিবরণ
প্রায় সাত মিনিটের ভিডিওতে আমিন উল্লাহ উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইনকে দায়ী করেছেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, “পুলিশ আমাকে কেন খুঁজছে জানি না। ওসি স্যারের উদ্দেশে বলছি, কোন অপরাধে আমার ছোট ভাইকে ধরেছেন? মামলা করার আগে তদন্ত করা উচিত ছিল। আমি বাসায় থাকতে পারতেছি না। সাংবাদিক হিসেবে নিউজ করা—এটা কি আমার অপরাধ?”
তিনি আরও যোগ করেন, “অত্যাচার বন্ধ না হলে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেব। আমি যদি আত্মহত্যা করি, এর দায়ভার থাকবে উখিয়া থানা–পুলিশের।” ভিডিওতে তিনি সেনাবাহিনী ও র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পুলিশের বক্তব্য
উখিয়া থানার ওসি মো. আরিফ হোসাইন সম্প্রতি রামু থানায় বদলি হয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, “ভিডিওটি আমি ফেসবুকে দেখেছি। সাংবাদিক আমিনকে আমি চিনি না, কখনো তার সঙ্গে কথা হয়নি। ভিডিওটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, গত ২৫ জুলাই বালুখালীতে ছাত্রলীগের মিছিল ও ইয়াবা লুটের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালালেও আমিন উল্লাহকে ধরে নেওয়া হয়নি।
নিহতের পরিবারের বক্তব্য
নিহত আমিন উল্লাহর মা আয়েশা খাতুন জানান, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ছেলের হত্যার বিচার চান। তার স্বামী আগেই মারা গেছেন। বর্তমানে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং আমিনের স্ত্রী নিয়ে একতলা বাড়িতে বসবাস করছেন।
স্থানীয় কয়েকজন বন্ধু জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে একটি এনজিওতে কাজ করার পর আমিন সাংবাদিকতা শুরু করেন। তাদের মতে, আত্মহত্যা বা হত্যার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে—প্রেমঘটিত সম্পর্ক অথবা ইয়াবার চালান লুটের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ।
উখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমিন উল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় নানা গুঞ্জন চলছে। তবে আসল কারণ এখনো পরিষ্কার নয়।
প্রভাব
এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে শোক ও উদ্বেগের ছড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের দায়িত্ব পালন করার স্বাধীনতার প্রশ্ন তুলে ধরেছে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাংবাদিকদের উপর এমন চাপ ও হুমকি সমাজে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এ ঘটনার তদন্তে জনগণের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তদন্তের স্বচ্ছতা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কক্সবাজারে তরুণ সাংবাদিক আমিন উল্লাহর মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ভিডিওর অভিযোগ এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়ার কারণে তা আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। তদন্তে স্বচ্ছতা, দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সময়োপযোগী।
এম আর এম – ১১৯২, Signalbd.com