সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ভান্ডারেই মেয়াদোত্তীর্ণ আড়াই কোটি টাকার ওষুধ, তদন্তে কমিটি

সুনামগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের ভান্ডারে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওষুধ ও প্যাথলজি সামগ্রী মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তের মাধ্যমে বোঝা হবে, কীভাবে এত বড় পরিমাণ ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হলো এবং কোথায় গাফিলতির সুযোগ ছিল।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ঘটনা
হাসপাতালের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, এই ওষুধ ও প্যাথলজি সামগ্রী একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছিল। তবে হাসপাতালের ভান্ডারে নথিভুক্তকরণ না হওয়ায় সেগুলো রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা হয়নি। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে ভান্ডাররক্ষক সুলেমান আহমদ এসব ওষুধ সংরক্ষণ করেছিলেন। কিন্তু কার্যাদেশ না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান হয়নি। ফলে ওষুধগুলো সময়মতো ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।
হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বক্তব্য
সুলেমান আহমদ জানিয়েছেন, তাকে শুধুমাত্র ওষুধগুলো রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। “নিয়মানুযায়ী ওষুধগুলো ভান্ডারে যুক্ত করা হয়নি, কারণ ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,” তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন।
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুর রহমানও জানিয়েছেন, তার দায়িত্ব নেওয়ার আগে ওষুধগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। সে সময় তিনি এগুলো ব্যবহার করতে পারেননি, কারণ যথাযথ নথিভুক্তি ও সরকারি অনুমোদন ছিল না। বর্তমানে হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
তদন্ত কমিটির গঠন
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং দায়ীদের শনাক্ত করতে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। কমিটির মাধ্যমে বোঝা যাবে, কীভাবে ওষুধগুলো হাসপাতালে আসে, কেন রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা হয়নি এবং কারা এতে দায়ী।
ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সুমন বণিক জানিয়েছেন, “আগের তত্ত্বাবধায়ক বদলি হয়ে যাওয়ায় এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক যোগদান না করায় আমরা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছি। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।”
হাসপাতালের সেবা ও পরিসংখ্যান
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ১,০০০–১,৪০০ রোগী সেবা নেন। ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০–৪৫০ জন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, “হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ আছে এবং সার্বিক সেবা স্বাভাবিকভাবে চলমান। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে তদন্ত চলছে।”
পূর্বপরিস্থিতি ও অনিয়মের কারণ
হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের শুরুর দিকে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যাদেশ না থাকায় এবং নথিভুক্তকরণ না হওয়ায় ওষুধগুলো পড়ে ছিল। এই ঘাটতি ও নিয়মভঙ্গের কারণেই রোগীরা সরাসরি ওষুধের সুবিধা পাননি। হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “এত ওষুধ যদি রোগীরা পেতেন, তাহলে উপকৃত হতেন। অনিয়ম বা গাফিলতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
কমিটির কাজ ও প্রত্যাশা
তদন্ত কমিটির দায়িত্ব হবে:
- মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা
- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও গাফিলত শনাক্ত করা
- ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম রোধের সুপারিশ তৈরি করা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন না করার কারণে ঘটে। যথাযথ নথিভুক্তি এবং নিয়মিত পর্যালোচনা থাকলে এমন অনিয়ম এড়ানো সম্ভব।
সংক্ষিপ্তসার
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ভান্ডারে মেয়াদোত্তীর্ণ আড়াই কোটি টাকার ওষুধের ঘটনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে কীভাবে এই অনিয়ম ঘটেছে এবং কারা দায়ী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারণ মানুষ আশা করছেন, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ হবে।
এম আর এম – ১১৫৩, Signalbd.com