
মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)-এর চারটি ঘাঁটিতে ভারতের ড্রোন হামলার অভিযোগ তুলেছে বিদ্রোহী সংগঠনটি। এতে ১৯ জন নিহত ও বহু আহত হওয়ার দাবি করা হলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ঘটনাটির বিস্তারিত বিশ্লেষণ
উলফার পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ভোররাতে শতাধিক ড্রোন ব্যবহার করে তাদের চারটি ঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালানো হয়। এসব ক্যাম্প মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। ড্রোন হামলার ফলে কয়েকটি ঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং অন্তত ১৯ জন সদস্য নিহত হন। আহত হন আরও ১৯ জনের বেশি।
সংগঠনটির দাবি, নিহতদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নয়ন অসমও রয়েছেন। তবে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস নিশ্চিত করতে পারেনি।
কেন এই সংঘর্ষ?
উলফা (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম) দীর্ঘদিন ধরেই আসাম রাজ্যের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ১৯৭৯ সালে গঠিত এই সংগঠনটিকে ভারত সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
উলফার একটি অংশ শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেও, উলফা-আই (ইন্ডিপেনডেন্ট) শাখাটি সশস্ত্র বিদ্রোহে সক্রিয় রয়েছে এবং তারা মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী জঙ্গলে নিজেদের ঘাঁটি গড়ে তুলেছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর অস্বীকার
ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহেন্দ্র রাওয়াত এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “মিয়ানমারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার রাখা হচ্ছে, তবে আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘনের প্রশ্নই আসে না।”
এই বিবৃতির মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী উলফার দাবিকে সরাসরি অস্বীকার করেছে, যদিও বিদ্রোহী সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও ভিডিও এবং চিত্র প্রমাণ উপস্থাপন করার কথাও বলা হচ্ছে।
আঞ্চলিক প্রভাব ও বিশ্লেষণ
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও ভারত এই হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে, তবুও এমন একটি অভিযানের গুঞ্জন মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত আসাম ও মণিপুর রাজ্যে বিদ্রোহীদের উপস্থিতি দমন করতে আগ্রাসী কৌশল গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে সীমান্তবর্তী মিয়ানমার অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হতে পারে।
“সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে আমাদের ১৯ জন সদস্যকে হত্যা করেছে”—উলফা-আই-এর এক মুখপাত্র।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বর্তমানে ভারত ও মিয়ানমার উভয়পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলেও, ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত সত্যতা নির্ধারণের জন্য উভয় দেশের পক্ষ থেকেই স্বচ্ছ তদন্ত ও তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
রোববার (১২ জুলাই) ভোরে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে উলফা-আই নামে পরিচিত ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম-এর অন্তত চারটি ক্যাম্পে ড্রোন হামলার অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনটি দাবি করেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযান চালায় এবং এতে তাদের ১৯ সদস্য নিহত হন। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ এ ধরনের কোনো হামলার কথা অস্বীকার করেছে।
এম আর এম – ০৩১৮, Signalbd.com