শেখ হাসিনার বিচার শুরু, ট্রাইব্যুনালে সরাসরি সম্প্রচার আজ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ সূচনা বক্তব্য, থাকছে প্রথম সাক্ষীর বয়ান
ঢাকা, ৩ আগস্ট ২০২৫ – ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ (রোববার) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রথমবারের মতো আজ এই বক্তব্য দেওয়া হবে এবং একই সাথে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বিচার কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
মামলার বিস্তারিত: আসামি কারা?
এই মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পাশাপাশি দুইজন আরেক আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
বিশেষ দৃষ্টিকোণ রয়েছে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ওপর, যিনি রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন এবং তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকার করেছেন যে, ওই সময়কালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং তিনি এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে আদালতের সহযোগিতা করবেন।
মামলার পটভূমি ও বিচারিক কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ প্রধান আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। এদিন একই সাথে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন। প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের জন্য ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালত এদিন মামলার অন্য দুই আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের দিনও নির্ধারণ করে।
আসামিদের অব্যাহতি আবেদন নাকচ
মামলার আগে আসামিরা অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছিল, তবে ট্রাইব্যুনাল তা বাতিল করে বিচার চলমান রাখার নির্দেশ দেয়। এই মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের স্বীকৃত মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
মামলা পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী আইনজীবী ও প্রসিকিউটর
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করছেন। এছাড়া আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ আদালতে উপস্থিত আছেন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার প্রক্রিয়া
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের উপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল তাকে কথা বলার সুযোগ দেয়, যেখানে তিনি নিজে স্বীকার করেন যে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং তিনি দায় স্বীকার করছেন।
তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি মামলার সত্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মামলার আগের কার্যক্রম ও নোটিশ
মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয় ১ জুলাই। এরপর ১৭ জুন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের আত্মসমর্পণের জন্য নোটিশ জারি করা হয়। তাদের ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে বলে জানানো হয়।
১ জুন ট্রাইব্যুনাল ৫টি গুরুতর অভিযোগ আমলে নেয় এবং ওইদিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বিচার: গুরুত্ব ও প্রভাব
এই মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারাধীন। এটি দেশের বিচারব্যবস্থায় একটি মাইলফলক।
বিশ্ববাসী এবং দেশীয় জনগণ এ মামলার প্রতি গভীর নজর রাখছেন কারণ এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের একটি নাজুক অধ্যায় বিচারপ্রণালীতে আসবে। এর সুষ্ঠু বিচার দেশের আইনি ও মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য বড় ধরনের প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে।
কী ধরনের অপরাধের অভিযোগ?
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই সময়কালে সরকারি বাহিনী ও সংশ্লিষ্টরা গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন, হত্যাচেষ্টাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। এসব অপরাধ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইনের কঠোর লঙ্ঘন।
আদালত এখন এই অভিযোগগুলো প্রমাণের জন্য সাক্ষী, দলিল ও অন্যান্য প্রমাণাদি পরীক্ষা করে চলেছে।
ট্রাইব্যুনালের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও প্রত্যাশা
আজকের সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষীর বয়ানের পর আসামিদের বিরুদ্ধে আরও সাক্ষী গ্রহণ, প্রমাণ উপস্থাপন এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা হবে।
মামলার শেষ পর্যায়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা যায় কিনা এবং সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।
সরাসরি সম্প্রচার: জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ
আদালত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ, মিডিয়া, গবেষক এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বিচার প্রক্রিয়ায় সরাসরি নজর রাখতে পারবেন।
এই পদক্ষেপ বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয় প্রতিধ্বনি
বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই মামলাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তারা আশা করছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে হবে।
দেশীয় রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজও এই মামলার প্রতি নজর রাখছে। অনেকেই এই মামলাকে দেশের আইনি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।
এক নজরে মামলার গুরুত্ব
- মামলা বিষয়: ২০২৫ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ
- প্রধান আসামি: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- অন্য আসামি: আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন
- মামলার অবস্থা: আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু, আজ সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ
- বিশেষ ঘটনা: চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন
- সম্প্রচার: ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার
- আইনজীবী ও প্রসিকিউটর: চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত
- মামলার গুরুত্ব: দেশের আইনি, রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
MAH – 12093 , Signalbd.com