বিমানবন্দরে বিদায়-স্বাগত, সর্বোচ্চ ২ জনের অনুমতি আজ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে নতুন একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা আজ রোববার (২৭ জুলাই) থেকে কার্যকর হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রীদের বিদায় বা স্বাগত জানাতে সর্বোচ্চ দুইজনই প্রবেশ করতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য যাত্রী চলাচলকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখা এবং যানজট প্রতিরোধ করা।
যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যানজট কমানোর লক্ষ্যে নতুন ব্যবস্থা
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী দেশ-বিদেশে যাতায়াত করে থাকেন। যাত্রীদের বিদায় ও স্বাগত জানানোর জন্য ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও এরাইভাল ক্যানোপিতে প্রায়ই বিশাল সংখ্যক মানুষ জমায়েত হয়ে যান, যার ফলে যানজট ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এই সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গত কিছুদিন ধরেই একটি নতুন নির্দেশনার প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছিল। আজ রোববার থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে যাত্রীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজন ব্যক্তি ডিপারচার ও এরাইভাল এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন।
নতুন নির্দেশনার বিস্তারিত
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও এরাইভাল ক্যানোপিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। বিশেষত, যাত্রীদের সঙ্গে বিদায় বা স্বাগত জানাতে আসা ব্যক্তিদের সংখ্যা সর্বোচ্চ দুইজন হতে হবে।
এই নতুন নিয়মটি:
- যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা,
- যানজট প্রতিরোধ করা,
- এবং বিমানবন্দর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
এই তিনটি মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গৃহীত হয়েছে।
যাত্রী ও তাদের পরিজনদের জন্য উপকারী হবে নতুন নির্দেশনা
যাত্রীদের সঙ্গে বিদায় ও স্বাগত জানানোর জন্য সাধারণত পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী প্রভৃতি অনেকেই বিমানবন্দর যান। কিন্তু অতিরিক্ত সংখ্যক মানুষের ঢল নামার কারণে যানজট লেগে যায়, যাত্রীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ঝুঁকির মুখে পড়ে।
নতুন এই নির্দেশনা অনুসরণ করলে বিমানবন্দরের ভেতরে অতিরিক্ত চাপ কমবে এবং যাত্রী ও তাদের সঙ্গীদের জন্য পরিবেশ হবে আরও সুস্থ ও সুশৃঙ্খল। এছাড়া, নিরাপত্তা কর্মীদের কাজ সহজতর হবে, কারণ সীমিত সংখ্যক মানুষ থাকার ফলে মনিটরিং এবং নিরাপত্তা বিধান কঠোরভাবে পালন করা সম্ভব হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা শহরের উত্তর পূর্বে অবস্থিত, বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর এবং প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী-বিদেশী যাত্রী এটি ব্যবহার করেন। বিমানবন্দরটিতে উন্নত মানের টার্মিনাল, আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যাত্রীসেবা সুবিধা রয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিমানযাত্রার নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে বিভিন্ন ধরনের নতুন প্রযুক্তি ও নিয়ম-কানুন প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক নতুন নির্দেশনাটি সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ।
বিশ্বের অন্যান্য প্রধান বিমানবন্দরে এরকম নিয়ম আছে
বিশ্বের অনেক বড় ও ব্যস্ত বিমানবন্দরেই যাত্রীদের বিদায় ও স্বাগত জানাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
- সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে নির্দিষ্ট প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ আছে,
- দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রবেশের সংখ্যা সীমাবদ্ধ,
- যুক্তরাষ্ট্রের জেটিসি বিমানবন্দরে (JFK) পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট প্রবেশ নিয়ম রয়েছে,
এই ধরনের নিয়মগুলো বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা সহজতর করে এবং যাত্রীদের সুবিধা দেয়।
যাত্রীদের করণীয় ও নির্দেশিকা
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নতুন নির্দেশনার আলোকে যাত্রী ও তাদের পরিজনদের জন্য কিছু করণীয় নির্দেশনা দিয়েছে:
- যাত্রীদের বিদায় বা স্বাগত জানানোর জন্য সর্বোচ্চ দুইজনকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে হবে,
- অতিরিক্ত লোকজনকে নিরাপত্তার কারণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না,
- যারা প্রবেশ করবেন, তাদের নিরাপত্তা বিধি মেনে চলতে হবে,
- নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে,
- যানজট এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিমানবন্দরে আসা এবং দ্রুত চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা ও মতামত
নতুন এই নির্দেশনার কারণে অনেক যাত্রী ও তাদের পরিবার কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষত যারা বড় পরিবার নিয়ে যাতায়াত করেন বা যারা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আসেন, তাদের জন্য এটি একটু কষ্টসাধ্য হতে পারে। তবে অধিকাংশ যাত্রী এই নতুন নিয়মকে সমর্থন করছেন যেহেতু এটি যাত্রাপথকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করে তোলে।
ভবিষ্যতে আরো কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে?
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে যাত্রী ও দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আরও আধুনিক প্রযুক্তি ও সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- স্মার্ট কার্ড সিস্টেম যা কেবল অনুমোদিত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিশ্চিত করবে,
- নিরাপত্তা চেক পয়েন্ট আরও দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় করার প্রযুক্তি,
- বিমানবন্দরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার,
- এবং যাত্রীদের জন্য আরও উন্নত ও প্রশস্ত ওয়েটিং লাউঞ্জ সুবিধা।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিদায়-স্বাগত জানাতে সর্বোচ্চ দুইজনের প্রবেশের নতুন নিয়ম আজ থেকে কার্যকর হওয়ায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও যানজট কমানোর ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই নির্দেশনা মানলে যাত্রীদের যাত্রা আরও সহজ, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে, দেশের মানুষ এই নতুন নিয়ম মেনে চলবেন এবং তাদের যাত্রাকে সুন্দর ও সুষ্ঠু করতে সহযোগিতা করবেন।