হিমাগার গেইটে আলুর কেজি ২২ টাকা নির্ধারণ

দেশে আলুর বাজারে অস্থিরতা ও উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের অসামঞ্জস্য দূর করতে সরকার বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে হিমাগার গেইটে আলুর সর্বনিম্ন মূল্য কেজি প্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করবে, যা আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তের বিস্তারিত
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি বাজারে আলুর দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে একটি চার সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হিমাগার গেইটে আলুর কেজি প্রতি ন্যূনতম ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করবে এবং আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে বাজারে ছাড়বে, যাতে বাজারে স্থিতিশীলতা আসে এবং কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আলুর উৎপাদন খরচ গড়ে ১৮–২০ টাকা হলেও খামার থেকে বিক্রির সময় কৃষকরা অনেক সময় ১৫–১৬ টাকা পেয়েছেন। এতে তারা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে হিমাগার গেইটে কোনো ব্যবসায়ী ২২ টাকার নিচে আলু কিনতে পারবেন না।
সরকার আশা করছে, এতে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন এবং পরবর্তী মৌসুমে তারা আলু চাষে উৎসাহিত হবেন।
বাজারে আলুর বর্তমান অবস্থা
দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সম্প্রতি আলুর দাম কমে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও জয়দেবপুরের পাইকারি বাজারে আলু কেজিপ্রতি ২০ টাকার নিচে নেমে আসে। এতে সাধারণ ভোক্তারা সাময়িকভাবে স্বস্তি পেলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে এখন থেকে হিমাগার গেইট ও পাইকারি বাজারে আলুর দাম ২২ টাকার নিচে নামবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি টন আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে একটি বড় অংশ হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় এবং সারা বছর বাজারে সরবরাহ করা হয়। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা উৎপাদন খরচের তুলনায় ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আন্দোলন করে আসছেন।
এর আগেও সরকার কয়েক দফা হিমাগার গেইটে আলুর ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেছে, তবে এবার তা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আলু ক্রয়ে সরকারের পরিকল্পনা
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে সংরক্ষিত ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে বাজারে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে। বিশেষ করে উৎসব মৌসুমে ভোক্তার চাহিদা বেড়ে যায়। তখন সরকারের এই মজুত বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া আগামী মৌসুমে কৃষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আলু চাষে আরও আগ্রহী হন।
ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
কৃষকরা সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন, এর ফলে বাজারে আলুর দাম কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। বর্তমানে কেজিপ্রতি ২৫–২৭ টাকায় আলু পাওয়া গেলেও নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দাম ৩০ টাকার কাছাকাছি যেতে পারে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপে হিমাগার মালিক ও কৃষকরা উপকৃত হবেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই সমাধানের জন্য উৎপাদন খরচ ও বাজার দামের মধ্যে সুষম সম্পর্ক রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত। শুধু আলু নয়, পেঁয়াজ, চালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যেও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
একজন কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, “কৃষকরা যদি তাদের উৎপাদনের ন্যায্য দাম না পান, তবে আগামী মৌসুমে চাষ কমে যাবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।”
পরিশেষে
সরকারের এই সিদ্ধান্তে আপাতত কৃষকরা স্বস্তি পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাজারের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। এখন দেখার বিষয়—আলুর নতুন দাম কার্যকর হওয়ার পর ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় এবং এটি বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে কতটা সফল হয়।
এম আর এম – ১০৬৪, Signalbd.com