আঞ্চলিক

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বাংলোবাড়ি

রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বাংলোবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। বুধবার সকালে কাটুরাইল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান দুই দিনের বিশেষ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

উচ্ছেদ অভিযানের বিস্তারিত

পোস্তগোলা সেতু থেকে ধোপাতিয়া বা কাটুরাইল খেয়াঘাট পর্যন্ত নদীর তীরের দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা ও ভরাট জমি অপসারণের জন্য এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা, ঢাকা জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার সদস্য এবং ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪-এর কর্মীরা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় এবং যে কোনো ধরনের বাধা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়।

অভিযানটি হাইকোর্টে করা রিট পিটিশনের আদেশ বাস্তবায়নের অংশ। নদীর জমি রক্ষার স্বার্থে এবং পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নদী তীরবর্তী দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

নসরুল হামিদের বাংলোবাড়ি কেন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে

নসরুল হামিদের বাংলোবাড়ি শুধু একটি অবৈধ স্থাপনা নয়, এটি রাজনৈতিক ক্ষমতার ছায়ায় কীভাবে নদীর সম্পদ দখল হয়েছে তার এক স্পষ্ট উদাহরণ। প্রশাসনের এই পদক্ষেপ একটি বার্তা দেয় যে, আইনের শাসনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণে প্রশাসন কোনো ছাড় দেবে না।

কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সালে জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিটের আদেশ অনুযায়ী নদীর জমি দখল করে গড়ে ওঠা এই স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুযায়ী এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকা বছরের পর বছর ধরে অবৈধ দখলের শিকার হয়েছে। এ ধরনের দখল দখলদারদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল। বিগত কয়েক বছরে বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এই ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

এর আগে, রাজধানীর বিভিন্ন নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিক অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নদী সংরক্ষণ এবং জনসাধারণের জন্য নদী ব্যবহার নিশ্চিত করা।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এলাকার পরিবেশ ও নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। স্থানীয় মানুষদের মতে, অবৈধ দখলদাররা নদীর পানি ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছিল।

রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। কিছু পক্ষ এটিকে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, আবার কিছু পক্ষ এ ধরনের উচ্ছেদকে বিতর্কিত বলেও উল্লেখ করছে। তবে প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আইনের সীমানার বাইরে কেউ থাকবে না।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ পরিচালিত অভিযানের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনার প্রায় ৭০ শতাংশ এখন পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের অভিযান স্থায়ীভাবে নদী রক্ষা করতে কার্যকর।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিযান শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ব্যক্তির সম্পত্তি উচ্ছেদ নয়, এটি দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন। নদী দখল রোধে এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও সুনিয়ন্ত্রিত ও নিয়মমাফিক হতে পারে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমানা পিলারের অভ্যন্তরে থাকা সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে এবং জনগণের স্বার্থে নদী সংরক্ষণের কাজ অব্যাহত থাকবে।

পরিশেষে

নসরুল হামিদের বাংলোবাড়ি উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা গৃহীত হয়েছে — আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্রশাসন ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে রাজধানীর নদী তীরবর্তী এলাকায় আরও কার্যকর উচ্ছেদ অভিযান চালানোর মাধ্যমে পরিবেশ ও জনস্বার্থের উন্নতি সম্ভব।

এম আর এম – ০৯৬৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button