১৮ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলো অন্তর্বর্তী সরকার

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ খাতে বড়সড় আর্থিক দায় পরিশোধ এবং কাঠামোগত সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত এক বছরে সরকার বৈদেশিক বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের বকেয়া বিল পরিশোধ করেছে প্রায় ১৮ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের বিদ্যুৎ খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
৭ হাজার ৯৩৪ কোটির বকেয়া থেকে নেমে এসেছে ২ হাজার কোটিতে
আদানি পাওয়ারের কাছে পূর্বের বকেয়া ছিল ৭ হাজার ৯৩৪.৮৯ কোটি টাকা। বর্তমান পরিশোধের পর বিলটি কমে এসেছে মাত্র ২ হাজার ৩৬৩.৫০ কোটি টাকায়। এই বিশাল অঙ্কের পরিশোধ বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করেছে।
সাশ্রয় হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা!
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় শুধু বিল পরিশোধেই নয়, বরং সাশ্রয়ের পথেও প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত এক বছরে নানান পদক্ষেপের ফলে বিদ্যুৎ খাতে ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
এই সাশ্রয় এসেছে কয়েকটি কার্যকর উদ্যোগ থেকে:
- তরল জ্বালানি আমদানির সার্ভিস চার্জ হ্রাস
- বড় আকারের শিপমেন্টের মাধ্যমে খরচ কমানো
- ট্যারিফ হ্রাস ও ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবস্থায় পরিবর্তন
- দক্ষতা উন্নয়ন ও অপচয় রোধ
সৌরবিদ্যুতে নজর, রুফটপ সোলার বাড়ছে
সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০২৫’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
- বাড়িতে রুফটপ সোলার ইনস্টলেশন বেড়েছে
- বড় বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদিত
- বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে
এটি বিদ্যুৎ আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়ক হবে।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পরিবর্তন
এছাড়া, গ্রিড ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, স্পিনিং রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ফ্রিকোয়েন্সি স্ট্যাবিলাইজেশন-এর মতো টেকনিক্যাল খাতেও সরকার অগ্রগতি এনেছে।
বিদ্যুৎ সঞ্চালনে দক্ষতা ও নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে নিচের উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে:
- গ্রিডে ভারসাম্য আনতে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন
- নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ ও পুরনোগুলোর সম্প্রসারণ
- বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় স্মার্ট মনিটরিং ব্যবস্থা চালু
ভর্তুকি কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও এক বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমানো সম্ভব হয়েছে। গত বছর যেখানে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা, সেখানে চলতি বছরে তা ৩৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
এটি প্রমাণ করে যে সরকার একদিকে আন্তর্জাতিক দায় পরিশোধ করছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করছে।
বিদ্যুৎ খাতে প্রকল্প ও উন্নয়ন কার্যক্রম
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর ফলে:
- নতুন সংযোগের সুযোগ বাড়ছে
- গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকাতেও বিদ্যুৎ পৌঁছাচ্ছে
- শিল্পাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যাচ্ছে
সার্বিক চিত্রে অগ্রগতির বার্তা
এই পরিসংখ্যান ও পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু দৈনন্দিন প্রশাসনেই নয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গভীরে গিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিদ্যুৎ খাতে দায়বদ্ধতা, সাশ্রয়, প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে বিনিয়োগ—এই চারটি স্তম্ভে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ এখন আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল।
MAH – 12184 , Signalbd.com