অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক গঠনের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার দাবি জানিয়ে বলেন, “নির্বাচনের আগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়ে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠা করা উচিত।” প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি জানান, ‘৭২-এর সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে হবে।’
দাবি এবং মূল বক্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে শরীফ ওসমান হাদি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস যদি বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেন তবে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারে।” তিনি উল্লেখ করেন, ‘৭২-এর সংবিধান যেখানে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেখানে দ্রুত সেটিকে বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনার দাবি তারা জানাচ্ছে। পাশাপাশি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসন সংস্কার করা অতীব জরুরি।’
ইতিহাস ও পটভূমি
শরীফ হাদি আরও বলেন, “ঘোষণাপত্রে ’৭১‑এর ইতিহাস বা শাহবাগ, শাপলা, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের গণহত্যা‑সংশ্লিষ্ট ঘটনা গৌণ করা হয়েছে। এই জাতীয় ঘটনা বিবেচনায় না নেওয়া হচ্ছে— এটি জাতীয় ইতিহাস বিকৃতির সুস্পষ্ট দিক।” তিনি দাবি করেন, “এই দফাযুক্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের স্বার্থে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রভাব এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
এই দাবি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ভেঙে দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবর্তে নিয়মতান্ত্রিক ভাবনায় নির্বাচন আয়োজনই জাতীয় স্বার্থে প্রধান। আবার অনেকে বলছেন, ভোগান্তিপূর্ণ এই সময় রাজনৈতিক সংস্কার আগে গতিশীলভাবে করা প্রযোজ্য। একই সঙ্গে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, প্রশাসন ও বিচারপ্রণালী গণতন্ত্রের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
“নতুন সংবিধান প্রণয়নের পথে এগিয়ে আসুক প্রধান উপদেষ্টা” — শরীফ ওসমান হাদি, ইনকিলাব মঞ্চ মুখপাত্র
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ
ইনকিলাব মঞ্চের উদ্বেগ ও দাবি মূলত ঐতিহাসিক যাত্রা এবং রাজনীতির অতীতকে স্বীকৃতি দেয়ার ওপর কেন্দ্রীভূত। ৭২‑এর সংবিধান ছিল যুগান্তকারী—তবে বাকশালের প্রতিষ্ঠা, বিচারিক হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির জন্য তা বিতর্কের সঙ্কোচে পড়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, নতুন সংবিধান রচনা এবং প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি স্থাপনে অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সারসংক্ষেপ
ইনকিলাব মঞ্চের দাবি একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ভবিষ্যত নির্দেশিত প্রস্তাব। তবে এতে বাস্তবায়নার পথে রাজনৈতিক ঐক্য, সংলাপ এবং সময়োপযোগী কর্ম পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রবাসী জনসাধারণ থেকে ছাত্র-যুব সমাজ—সব শ্রেণীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে এই জাতীয় প্রস্তাবনাই আসলেই সফল হবে। যদিও প্রস্তাবনায় প্রশ্ন থেকে যায়—এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন কতটা তাৎক্ষণিক, এবং জনগণের সঙ্গে কতখানি রাজনৈতিক ইক্যুয়েট সামঞ্জস্যপূর্ণ?
এম আর এম – ০৭৪৭, Signalbd.com