আঞ্চলিক

সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: পুড়েছে ৩ দোকান, যান চলাচল বন্ধ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কেঁপে উঠল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায় শুক্রবার (১৫ আগস্ট) গভীর রাতে হঠাৎ আগুন লেগে জাহাজের পুরোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিক্রির অন্তত তিনটি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।

কিভাবে আগুনের সূত্রপাত?

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথমে একটি দোকানের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই ধোঁয়া আগুনে রূপ নেয় এবং আশপাশের দোকানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা দোকান থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসেন। আগুনের তীব্রতায় আশপাশের এলাকাতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

দোকানগুলোর ক্ষয়ক্ষতি

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোতে মূলত পুরোনো জাহাজ থেকে আনা নিরাপত্তা সামগ্রী—লাইফ জ্যাকেট, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, জরুরি সিগন্যাল লাইট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেফটি বেল্ট ইত্যাদি মজুদ ছিল। এসব সামগ্রীর কারণে আগুন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। টানা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন—
“আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। তবে দোকানগুলোতে দাহ্য পদার্থ বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।”

মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ

চেয়ারম্যানঘাটা এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্যস্ততম অংশগুলোর একটি। আগুন লাগার পর ধোঁয়া ও আগুনের তীব্রতার কারণে মহাসড়কে যান চলাচল দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে। ফলে সড়কে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে যায়। যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ব্যবসায়ীদের হাহাকার

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা চোখের সামনে তাদের সমস্ত পুঁজি ছাই হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজন দোকান মালিক বলেন—
“আমার দোকানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সরঞ্জাম ছিল। সবকিছু আগুনে শেষ হয়ে গেল। আমি এখন পথে বসে গেলাম।”

স্থানীয়দের ভূমিকা

আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা buckets, পানির ড্রাম ও মেশিন দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। তবে আগুনের ভয়াবহতায় তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে পুনরাবৃত্তি: সীতাকুণ্ডের আতঙ্ক

উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডে এর আগে একাধিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়। ২০২৩ সালেও সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইয়ার্ডে আগুনে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব ঘটনায় দেশের শিপ ব্রেকিং শিল্পে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

অগ্নিকাণ্ড রোধে করণীয়

অগ্নি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে—

  • বাজার ও শিল্প এলাকাগুলোতে যথাযথ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • দোকান ও গুদামে বিদ্যুতের তার নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
  • দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণে আলাদা নিরাপদ জায়গা রাখতে হবে।
  • ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত মহড়া পরিচালনা করতে হবে।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

সীতাকুণ্ডের এই অগ্নিকাণ্ড আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শিল্প ও ব্যবসায়িক এলাকায় অগ্নি নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার ক্ষতি এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিল।

MAH – 12337 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button