গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে নাস্তার টাকা ও আগের বাকি চাওয়াকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তি পিস্তল দিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে হোটেল মালিকের ছেলে ও এক নারী কর্মচারী আহত হয়েছেন। অভিযুক্তের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও অপরাধের ইতিহাস খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বিস্তারিত
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে নাপিতের বাজারে অবস্থিত হোটেল ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিকের হোটেলে আসেন গোলাপ মিয়া। নাস্তা শেষে তিনি বিল না দিয়ে চলে যেতে চাইলে অসীম মিয়া তার কাছে বিল এবং পূর্বের বকেয়া টাকা চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গোলাপ কোমরে থাকা পিস্তল বের করে অসীমকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি চালান।
গুলিতে আহত অসীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন নারী কর্মচারী সেলিনা বেগম। তাকেও লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পরে স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে দুজনকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
আহতদের অবস্থা
গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মিনু জানান, অসীমের কোমরের নিচে ও সংবেদনশীল স্থানে গুলির আঘাত রয়েছে এবং তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। তবে সেলিনা বেগম প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই হাসপাতাল ছেড়ে যান। চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী, আহত অসীমের দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
অভিযুক্তের পরিচয় ও অতীত অপরাধ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলাপ মিয়া সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চক দারিয়া গ্রামের মৃত তয়েজ উদ্দিনের ছেলে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গোলাপ দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা, অস্ত্র কেনাবেচা ও চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িত। এছাড়া তিনি সবসময় অস্ত্র বহন করতেন এবং স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেত না।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ
স্থানীয়দের দাবি, গোলাপ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং সাবেক এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। শৈশব থেকেই তিনি স্মৃতির পলাশবাড়ীর বাসায় থাকতেন। তবে তিন বছর আগে টাকা চুরির অভিযোগে তাকে ওই বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। সরকার পতনের পরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়ে নানা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য
ঘটনার খবর পেয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং গোলাপকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন,
“অভিযুক্তকে ধরতে আমরা তৎপর রয়েছি। ঘটনার সময় পিস্তল, বন্দুক নাকি অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও তদন্তের আওতায় আছে।”
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় নাপিতের বাজার এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত গোলাপকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন,
“গোলাপকে গ্রেপ্তার না করলে আমরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারব না। সে যেকোনো সময় আবার এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।”
সংক্ষিপ্তসার
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নাপিতের বাজার এলাকায় নাস্তার বিল ও আগের বাকি টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে এ ঘটনায় হোটেল মালিকের ছেলে অসীম মিয়া (১৭) এবং নারী কর্মচারী সেলিনা বেগম (৪২) আহত হয়েছেন। অভিযুক্ত গোলাপ মিয়া (৩৬) ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
গাইবান্ধার এই গুলি চালানোর ঘটনায় পুরো এলাকায় উদ্বেগ ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্তের অতীত অপরাধ ও রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। এখন সবার নজর পুলিশের হাতে তার গ্রেপ্তারের দিকে। প্রশ্ন রয়ে যায় — দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে কি এলাকায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যাবে?
এম আর এম – ০৮৩৫, Signalbd.com



