৬ আগস্ট রাতে টঙ্গীর বনমালা এলাকায় ঘটে এক শোকার্ত ঘটনা, যেখানে পূর্ব শত্রুতার জেরে নরসিংদীর করিমপুর এলাকার অলিকে হত্যার পর লাশ ৮ টুকরা করে ফেলা হয়। অভিযোগে নাম উঠে আসছে আপেল মাহমুদ সাদেকের। এই ঘটনায় র্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে একজন সাদেক নিজেও এবং অন্যরা হলেন সাজ্জাদ হোসেন রনি ও সাদেকের স্ত্রী শাওন বেগম।
ঘটনার বিস্তারিত: কীভাবে সংঘটিত হলো এই হত্যাকাণ্ড
র্যাবের তথ্যমতে, অলিকে প্রথমে টঙ্গীর বনমালা এলাকায় সাদেকের ভাড়া বাসায় ডেকে আনা হয়। সেখানে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এবং পূর্বের শত্রুতার কারণে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ৮ টুকরো করে মাথাটি টয়লেটের ফলস ছাদের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। দুই দিন পর গন্ধ পেয়ে ৮ আগস্ট ভোরে দুটি ট্রাভেল ব্যাগে ভাগ করে টঙ্গী স্টেশন রোডের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, হত্যার মূল কারণ ছিল অলির করা আপত্তিকর মন্তব্য, যা সাদেকের স্ত্রীকে নিয়ে ছিল। এই মন্তব্যের জেরে উত্তেজিত সাদেক এবং তার সহযোগীরা পরিকল্পনা করে তাকে মারার।
কেন সাদেক ও অলির মধ্যে শত্রুতা ছিল?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অলির এবং সাদেকের মধ্যে পূর্ব থেকেই শত্রুতা ছিল। অলির আচরণ ও তার দ্বারা করা মন্তব্য সাদেকের পরিবারকে নানাভাবে বিরক্ত করত। বিশেষ করে তার স্ত্রী শাওন বেগমের প্রতি অলির অশালীন কথা এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ শত্রুতার মূল কারণ হিসেবে দেখা গেছে।
এর আগে অলির ভাগ্নেকেও মারধর করার অভিযোগ ছিল, যা নতুন এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে গোপন ফসলের মতো ছিল। সুতরাং, এই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিবাদের উত্তেজনা একসময় হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার: র্যাবের ভূমিকা
র্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সালমান নূর আলম জানান, ঘটনার পর র্যাব তৎপর হয়ে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকা থেকে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে এবং পুরো পরিকল্পনার বর্ণনা দেয়। এছাড়া টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের সহযোগিতায় অপর এক সন্দেহভাজন বাপ্পী হোসেনকেও আটক করা হয়, যিনি তদন্তের আওতায় আছেন।
গ্রেপ্তারের পর নিহতের মাথা ও কাপড় উদ্ধার করা হয় সাদেকের ভাড়া বাসা থেকে।
এই হত্যাকাণ্ডের সামাজিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই ভয়াবহ ঘটনায় টঙ্গী ও নরসিংদী এলাকায় গভীর শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেখানে অনেকেই বিচার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন।
পুলিশ ও র্যাব জানিয়েছে, তারা ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে এবং দ্রুত সময়ে অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ করছে।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা ও বিচার প্রক্রিয়া
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হবে না।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও পারিবারিক বিবাদের কারণে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়া সামাজিক সংকটের প্রমাণ। এজন্য পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সতর্কতা এবং সচেতনতা জরুরি।
সংক্ষেপে ঘটনা
৬ আগস্ট টঙ্গীতে সাদেকের বাসায় ডেকে নিয়ে অলিকে হত্যার পর লাশ ৮ টুকরা করে ফেলে দেওয়া হয়। হত্যার কারণ ছিল অলির স্ত্রীকে নিয়ে করা আপত্তিকর মন্তব্য। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তদন্ত অব্যাহত আছে।
এম আর এম – ০৭৮৮, Signalbd.com



