আঞ্চলিক

চার জেলায় বন্যার আশঙ্কা, সতর্কবার্তা জারি

Advertisement

 উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। একইসঙ্গে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু এলাকায়ও প্লাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

দেশের উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের তিস্তা-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

সোমবার সকালে প্রকাশিত বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানির কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। পাশাপাশি গাইবান্ধার কিছু অংশেও সাময়িক প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।

আগেও এমন পরিস্থিতি

গত কয়েক বছরে তিস্তা নদী পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে একাধিকবার আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এই অঞ্চলগুলোতে নদীর পানি দ্রুত বাড়ার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বিশেষ করে নীলফামারী ও লালমনিরহাটে বহু পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। তিস্তা ব্যারাজ এলাকার পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ।

এবারের বৃষ্টিপাত ও নদীর আচরণ দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, পরিস্থিতি পূর্বের মতোই হতে পারে যদি প্রাকৃতিক পরিস্থিতি দ্রুত না বদলায়।

কোন কোন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে

এবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিচের জেলা ও এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে:

  • লালমনিরহাট: তিস্তা পাড়ের হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও কালীগঞ্জ উপজেলা
  • নীলফামারী: ডিমলা, জলঢাকা ও সৈয়দপুর উপজেলা
  • রংপুর: গঙ্গাচড়া, পীরগাছা
  • কুড়িগ্রাম: চিলমারি, রাজারহাট, উলিপুর ও ভূরুঙ্গামারী
  • গাইবান্ধা (আংশিক): ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ

এছাড়া সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি নদ-নদীর পানিও সতর্কসীমা ছুঁই ছুঁই করছে, যার ফলে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে পানির প্রবেশ ঘটতে পারে।

বৃষ্টিপাত ও উজানের পানির প্রভাব

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো— মেঘালয়, আসাম, অরুণাচল ও ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি বাংলাদেশের সীমানা সংলগ্ন নদীগুলোতে পড়ছে।

একই সঙ্গে দেশের ঢাকা, রংপুর ও সিলেট বিভাগেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী কয়েক দিনে আরও বড় ধরনের জলাবদ্ধতা এবং বন্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সতর্কতা

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, “তিস্তার পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি। গৃহস্থালি, কৃষি ও অবকাঠামো রক্ষায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা আশঙ্কাপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরুরি সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে এবং নৌকাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পরবর্তী করণীয়

বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিম্নাঞ্চলবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য, খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সারসংক্ষেপ  

দেশের উত্তরাঞ্চলে নদীর পানি বৃদ্ধি এবং উজানের চাপের কারণে যে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা শুধু চারটি জেলাকে নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্য উৎপাদন ও অবকাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে।

এখনই প্রয়োজন জনসচেতনতা, প্রস্তুতি ও সমন্বিত পদক্ষেপ।

এম আর এম – ০৬৮৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button