আঞ্চলিক

ডিসির গাড়ি যেন কাদা না মাড়ায়, তাই বিদ্যালয়ের মাঠে রাতারাতি রাস্তা

Advertisement

বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানমের আগমনের আগে রাতারাতি নির্মাণ করা হয় একটি অস্থায়ী রাস্তা। স্থানীয় জনসাধারণ এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা নির্মাণকে অপ্রয়োজনীয় ও অনভিপ্রেত বলে বর্ণনা করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী কোনো পথ বা সড়ক নির্মাণ না করে এক দিনের জন্য মাত্র ডিসির গাড়ির সুবিধার জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং কাজ করা হল?

ডিসির গাড়ি যেন কাদা না মাড়ায়: অস্থায়ী রাস্তার পেছনের কারণ

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে বিদ্যালয়ের মাঠ কাদা-মাটি দিয়ে ভরে গেছে। এই কাদা-মাটির মধ্য দিয়ে ডিসির গাড়ি চলাচল করতে পারছিল না। তাই জেলা প্রশাসকের আগমনের ঠিক আগে রাতের আঁধারে ইট-বালু দিয়ে একটি অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়দের ভাষায়, “ডিসির গাড়ি যেন কাদা না মাড়ায়, সেই জন্যই এই রাস্তা।”

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৯ জুলাই সোমবার রাতের মধ্যে প্রায় ৩৩ জন শ্রমিক প্রায় ১৩ হাজার ইট ও ২০ গাড়ি বালু ব্যবহার করে মাঠের মধ্য দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শেষ করেন। এই কাজের জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

ডিসির জয়ন্তী কর্নার ও স্যানিটারি ন্যাপকিন মেশিন উদ্বোধন: রাতারাতি রাস্তার কারণ

পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বিদ্যালয়ে আয়োজিত জয়ন্তী কর্নার এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় অংশ নেন। ডিসির আগমনের আগেই মাঠের উপর রাস্তা নির্মাণ করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোতোষ দাশ বলেন, “আমরা রাস্তা তৈরি করিনি, এটি প্রশাসনের উদ্যোগ। কারণ ছিল ডিসির গাড়ি যেন কাদা না মাড়ায়। আমরা চাই না বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের নামে ভুল ধারণা সৃষ্টি হোক।”

শিক্ষার্থীদের মাঠে রাস্তা: জনমতের বিরোধিতা ও প্রশ্ন

স্থানীয়রা এবং শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এভাবে রাস্তা নির্মাণ করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ডিসির সফরের জন্য এই ব্যয়বহুল উদ্যোগ কেন নেওয়া হল, তা জনগণের সামনে প্রশ্ন হিসেবে উঠেছে। অনেক অভিভাবক ও স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে মাঠের জায়গা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এক অভিভাবক বলেন, “আমরা মনে করেছিলাম হয়ত বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে, কিন্তু পরবর্তীতে জানলাম, ডিসির গাড়ির জন্য কাদা দূর করতে রাস্তা বানানো হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মতামত: কাজের উদ্দেশ্য এবং অর্থায়ন

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলম জানান, “বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সমস্যা দূর করতে এই রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি মাঠের মাঝখানে নয়, পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কাজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়নি, একটি চলমান প্রকল্পের আওতায় এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।”

তবে স্থানীয়দের অনেকের দাবি, এই প্রকল্পের আওতায় এমন ব্যয়বহুল কাজের প্রয়োজন ছিল না এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে নেওয়া হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা: সুশাসন এবং সাধারণ মানুষের সুবিধার প্রশ্ন

চট্টগ্রামের সামাজিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন,
“শিক্ষার্থীরা মাঠ দিয়ে হেঁটে আসুক, এতে কি সমস্যা? ডিসি তো জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তিনি কাদা-মাটি মাড়াতে পারেন না। তাই এক রাতেই তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মাঠের ওপর ইট-বালু দিয়ে রাজপথ নির্মাণ! বছরের পর বছর এই মাঠে জলাবদ্ধতা ও কাদা জমে থাকলেও কোনো প্রকল্প চোখে পড়ে না। অথচ এক দিনের ভিআইপি সফরে এমন তৎপরতা দেখে মনে হয়, উন্নয়ন মানে শুধু উচ্চপদস্থদের আরাম।”

বিস্তারিত বিশ্লেষণ: বিদ্যালয় মাঠে রাস্তা নির্মাণের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ কেবল শিক্ষার্থীদের খেলার জায়গাই নয়, এটি তাদের নিয়মিত যাতায়াতের অন্যতম প্রধান রাস্তা। মাঠের মাঝখানে রাস্তা তৈরি হলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা সংকুচিত হবে। এ কারণে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন যে, ভবিষ্যতে এমন পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া, একে তারা আধাসাময়িক ও অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে দেখছেন যা শুধুমাত্র ডিসির সফরের জন্য রাতে করানো হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট।

স্থায়ী সড়ক ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের সুবিধা: প্রস্তাবনা

স্থানীয়রা ও বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, সরকারের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যাতায়াত ও মাঠের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য স্থায়ী ও দৃষ্টিনন্দন রাস্তা নির্মাণ করা। শুধুমাত্র এক দিনের জন্য ভিআইপি সফরের সুবিধার জন্য এই রকম ব্যয়বহুল ও অস্থায়ী কাজ করার পরিবর্তে, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।

সরকারের ভূমিকা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা: প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং উন্নত শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। মাঠের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেন কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে বালিকা বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে খেলার মাঠের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই, প্রশাসনের উচিত স্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা হাতে নিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য কাজ করা।

বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ডিসির গাড়ির জন্য রাতারাতি রাস্তা নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা এবং আলোচনা চলছে। স্থানীয় ও শিক্ষার্থীরা এই পদক্ষেপকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। প্রশাসন জানিয়েছে এটি শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত ব্যয় হয়নি। কিন্তু অনেকের মত, উন্নয়ন শুধু ভিআইপি সুবিধার জন্য নয়, সাধারণ মানুষের ও শিক্ষার্থীদের জন্যও হওয়া উচিত।

 MAH – 12050, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button