আঞ্চলিক

৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা অধ্যাপককে আবারও বদলি

Advertisement

জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসা সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানুকে আবারও বদলি করা হয়েছে। এর আগে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি করা হয়েছিল, এবার নতুন কর্মস্থল জামালপুর।

ঘটনার শুরু

জুলাই আন্দোলনের সময় আলোচিত সরকারি তিতুমীর কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানুকে আবারও বদলি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে বদলি করার বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে।

বদলির সরকারি ঘোষণা

সোমবার প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানুকে তার বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে পুনরায় পদায়ন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সময়মতো যোগদান না করলে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।

মামলা

২০২৪ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের শত শত শিক্ষার্থীও এই আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে ২৫ জুলাই বনানী থানায় প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু। মামলার বাদী হিসেবে তিনি অভিযোগ করেন যে আন্দোলনকারীরা অরাজকতা সৃষ্টি করেছেন এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছেন।

এই মামলার পর তিনি দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসেন এবং ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলির ঘটনা

মামলার কিছুদিন পর ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে তিতুমীর কলেজ থেকে সরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে পদায়ন করে। তখনও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন তার বদলি বাতিলের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে। এরপর গত বছরের শেষ দিকে তাকে সেই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার কথা থাকলেও আন্দোলনের কারণে সেই পদোন্নতি স্থগিত হয়ে যায়।

আবারও বদলির কারণ কী?

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার কথা উল্লেখ করে তাকে আবারও বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে এমন যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতেই এই বদলি।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

তিতুমীর কলেজ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকে তার প্রতি আস্থা হারিয়েছে তারা। কেউ কেউ মনে করেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের মধ্যে এমন একটি মামলা বড় ধরণের ফাঁটল তৈরি করেছে। তবে জামালপুরে তার নতুন কর্মস্থলে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়।

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষকদের ভূমিকা ইতিবাচক হওয়া জরুরি। তাদের মতে, মামলা করা আইনের অধিকার হলেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা উচিত ছিল। এ ধরনের মামলার কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দূরত্ব তৈরি হয়।

একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “এখন সময় এসেছে শিক্ষা ক্ষেত্রে আস্থা পুনরুদ্ধার করার। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না।”

ভবিষ্যতে কী হতে পারে?

এই বদলি দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে। তবে মামলার বিষয়টি আদালতে চলমান থাকায় ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনেকের মতে, আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনার উদ্যোগ নিলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

শেষ কথা 

৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসা অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানুকে তৃতীয়বারের মতো বদলি করা হলো। এবার তার গন্তব্য জামালপুর। দেশের শিক্ষাঙ্গনে এই ঘটনাটি আবারও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, মামলা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

এম আর এম – ০৫৯১ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button