গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত তিন ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আদালতের নির্দেশে এই ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
ঘটনার বিস্তারিত
গোপালগঞ্জে এনসিপির (ন্যাশনাল চেঞ্জ পার্টি) ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তিন ব্যক্তির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের বাসিন্দা ইমন তালুকদার, রমজান কাজী এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোহেল রানা মোল্লা। কবর থেকে লাশ উত্তোলনের কাজটি আজ সকালে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থান এবং টুঙ্গিপাড়ার নির্দিষ্ট কবরস্থান থেকে সম্পন্ন হয়।
এই প্রক্রিয়া সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির অপেক্ষায় তা দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ময়নাতদন্ত শেষে আজই পুনরায় দাফন করা হয়।
সংঘর্ষের পেছনের প্রেক্ষাপট
গত সপ্তাহের বুধবার গোপালগঞ্জ শহরে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত চারজন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন।
এছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন রমজান মুন্সি বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। পরদিন তার ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সম্পন্ন হয়। তবে প্রথম তিনজন নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে দাফন করা হয়, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে।
এ ঘটনার পাঁচ দিন পর প্রশাসনের নির্দেশে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে পুনরায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রশাসনের ভূমিকা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের পর জেলা প্রশাসন কারফিউ ও ১৪৪ ধারা জারি করে শহরজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়।
পাঁচদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এসব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। এরপর থেকেই দোকানপাট খুলতে শুরু করে এবং জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, “আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আজ তিনজনের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত আটটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে প্রায় আট হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এতে অনেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় কিংবা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “বিনা কারণে বহু মানুষকে আসামি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।”
অন্যদিকে জেলা বিএনপি এবং এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশের বিরুদ্ধে গণগ্রেফতারের অভিযোগ তুলেছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
এই সংঘর্ষ এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তারা দাবি করছে, সরকারবিরোধী মতপ্রকাশ দমাতেই এই সংঘর্ষ ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে সরকারপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন শুধু তার দায়িত্ব পালন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ঘটনা আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মাঠে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রশাসনের ভূমিকা ও আইন প্রয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা পরীক্ষা দিতে হবে।”
ভবিষ্যতের পদক্ষেপ ও জনমত
এখন প্রশ্ন উঠেছে—এমন সংঘর্ষ কেন ঘটলো? কেন ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে প্রশাসন এবং সংবাদমাধ্যম।
স্থানীয়রা চাইছে, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া হোক।
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলার তদন্তে গতি আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে জনআস্থা আরও ক্ষুণ্ণ হবে।
এম আর এম – ০৪৫৪, Signalbd.com



