আঞ্চলিক

যশোরের ৯ থানায় চালু হলো অনলাইন জিডি সেবা

Advertisement

যশোর জেলা পুলিশ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি জেলার ৯টি থানায় চালু করেছে অনলাইন জিডি (সাধারণ ডায়েরি) সেবা। এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। ডিজিটালাইজেশন ও নাগরিকদের জন্য সেবাকে আরও সহজ ও কার্যকর করার অংশ হিসেবে যশোরে এই সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার রওনক জাহান।

আধুনিক প্রযুক্তিতে পুলিশি সেবা

রোববার (২০ জুলাই) দিবাগত রাতে যশোরের কোতোয়ালি মডেল থানায় উদ্বোধিত এই সেবা পুলিশের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য পুলিশি সেবাকে সর্বোচ্চ দ্রুততা ও নির্ভুলতায় জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। এই অনলাইন জিডি সেবা সেই লক্ষ্য পূরণে একটি বড় পদক্ষেপ।”

ঘরে বসেই সেবা নেওয়ার সুবিধা

নতুন এই সেবার মাধ্যমে যেকোনো নাগরিক এখন আর থানায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে অ্যাপ ব্যবহার করে বাড়ি থেকেই সহজেই জিডি করা সম্ভব। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র হারানো জিনিসপত্র সংক্রান্ত জিডি নয়, নিখোঁজ ব্যক্তিসহ মোট ২৯ প্রকার অপরাধের জন্য অনলাইনে জিডি দায়ের করা যাবে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, “আগে অনলাইনে শুধুমাত্র হারানো জিনিসপত্রের জিডি গ্রহণ করা যেত, কিন্তু নতুন এই অ্যাপে আপনি পুলিশের কাছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ সহজেই করতে পারবেন। এতে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা আরও বাড়বে।”

২৯ ধরনের অপরাধে অনলাইন জিডি

এই অ্যাপে বর্তমানে ২৯টি ভিন্ন ধরনের অপরাধের তথ্য রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • হারানো ও চুরি হওয়া মালামাল
  • নিখোঁজ ব্যক্তি সম্পর্কিত অভিযোগ
  • বিভিন্ন প্রকার সাইবার অপরাধ
  • পারিবারিক ও সামাজিক বিবাদ
  • ছোটখাটো সংঘর্ষ বা অশান্তি
  • স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত অভিযোগ

এর মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে জনসাধারণের যোগাযোগ আরও মজবুত হবে এবং অপরাধ দমন কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।

পুলিশের উদ্যোগ ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ

যশোর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার বলেন, “এই ধরনের ডিজিটাল উদ্যোগ পুলিশের কাজকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করবে। থানায় ভিড় কমবে, সময় বাঁচবে এবং পুলিশ জনগণের কাছে আরও কাছে আসবে।”

অন্যদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) আহসান হাবীব জানান, “আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার সঙ্গে সেবা প্রদানে। অনলাইন জিডি সেবার মাধ্যমে মানুষ থানায় আসা ছাড়াই অভিযোগ করতে পারবে, যা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।”

জেলা পুলিশের আরও আধুনিক উদ্যোগ

যশোর জেলা পুলিশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান বৃদ্ধি করছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা বৃদ্ধি
  • দ্রুত প্রতিক্রিয়া দলের গঠন
  • অনলাইন ট্রাফিক ব্যবস্থা ও তথ্য সরবরাহ
  • ডিজিটাল জরিমানা পরিশোধ ব্যবস্থা

এইসব প্রযুক্তির সমন্বয়ে যশোর পুলিশ সাধারণ মানুষের সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

দেশের অন্যান্য জেলার জন্য দৃষ্টান্ত

যশোরের ৯টি থানায় অনলাইন জিডি চালু হওয়া দেশের অন্য জেলা ও অঞ্চলের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে পুলিশি সেবা ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে যশোরে এর ব্যাপক বাস্তবায়ন বিশেষ প্রশংসার দাবিদার।

বাংলাদেশ পুলিশ মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগামীতে দেশের সকল থানায় ধাপে ধাপে এই ধরনের অনলাইন সেবা চালু করা হবে যাতে জনগণ থানায় গিয়ে সময় নষ্ট না করে দ্রুত সেবা গ্রহণ করতে পারে।

নাগরিক সুবিধা ও নিরাপত্তার স্বার্থে

নাগরিকরা জানাচ্ছেন, এই সেবা চালু হওয়ায় তাদের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়েছে। আগের মতো থানায় গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না, যা বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের জন্য বড় সুবিধা।

সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ পুলিশি সেবা

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, “এই সেবা আমাদের কাজকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করবে। নাগরিকদের অভিযোগ দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।”

ওসি তদন্ত কাজী বাবুল জানান, “অনলাইন জিডি সেবার মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত ও নির্ভুল হবে, কারণ অভিযোগের সঠিক তথ্য মোবাইলে থাকায় অনুসন্ধান সহজ হবে।”

অনলাইন জিডি সেবার ব্যবহার বিধি ও প্রক্রিয়া

১. রেজিস্ট্রেশন:
অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে প্রথমে ব্যবহারকারীকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হয়।

২. অভিযোগ নির্বাচন:
২৯ ধরনের অপরাধের মধ্যে থেকে প্রাসঙ্গিক বিষয় নির্বাচন করতে হবে।

৩. তথ্য প্রদান:
অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য যথাযথভাবে লিখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ছবি বা ডকুমেন্ট আপলোড করতে পারবে।

৪. জমা দেওয়া:
সব তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর অভিযোগ জমা দিতে হবে।

৫. রশিদ ও ট্র্যাকিং:
জিডি জমা দেওয়ার পর ব্যবহারকারী একটি কনফার্মেশন নম্বর পাবে। অনলাইনে এটি ট্র্যাক করা যাবে।

ডিজিটাল যুগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ অবিলম্বে জরুরি। যশোরের ৯টি থানায় অনলাইন জিডি সেবা চালু হওয়া দেশের পুলিশি সেবার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এই সেবার মাধ্যমে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও সেবার মান উন্নত হবে, পাশাপাশি অপরাধ দমন কার্যক্রমের গতি বাড়বে।

আসন্ন দিনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই ধরনের সেবা চালু হয়ে বাংলাদেশের পুলিশি ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও জনবান্ধব করে তুলবে। নাগরিকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজে নিরাপত্তা সেবা পাবে, যা দেশের সুশাসন ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button