আঞ্চলিক

পাবনায় অস্ত্র কেনাবেচার ভিডিও ভাইরাল, স্থানীয়দের আতঙ্ক

Advertisement


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পাবনা। ভিডিওতে অস্ত্র কেনাবেচার দৃশ্য দেখা গেলেও জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। রাজনৈতিক সংগঠনের নাম জড়িয়ে বিতর্ক আরও গভীর হচ্ছে।

ভিডিওর বিবরণ ও ভাইরাল হওয়ার প্রক্রিয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ছয় থেকে সাতজন ব্যক্তি একটি নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন নগদ টাকা গুনছেন, আরেকজন একটি আগ্নেয়াস্ত্র পরীক্ষা করছেন। কথোপকথনের এক পর্যায়ে একজন বলেন, “নষ্ট, পুরোনো নাকি? ঠিক আছে তো?” অপরজনের জবাব, “লস্টও লয়, পুরাতনও লয়, সব ঠিক আছে।”

ভিডিওটি মূলত ফেসবুক ও টিকটক প্ল্যাটফর্মে দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। মন্তব্যের ঘরে অনেকে দাবি করেন, এই ব্যক্তিরা চরতারাপুর এলাকার বাসিন্দা এবং রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের অগ্রগতি

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম জানান, ভিডিওটির বিষয়ে পুলিশ অবগত এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিওটি পুরোনো। তবুও আমরা এটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।”

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও সাইবার ইউনিট যৌথভাবে ভিডিওর সোর্স এবং জড়িতদের পরিচয় বের করতে কাজ করছে। ভিডিওতে যেহেতু কারও মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, তাই পরিচয় নিশ্চিত করতে সময় লাগছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

রাজনৈতিক বিতর্ক: যুবদলের নাম কেন জড়ালো?

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়ভাবে দাবি ওঠে যে জড়িত ব্যক্তিরা যুবদলের কর্মী। এ নিয়ে পাবনা জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে জরুরি এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, সেখানে কারও মুখ স্পষ্ট নয় এবং যাকে যুবদলের কর্মী বলা হচ্ছে, তিনি আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।”

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইলিয়াস আহম্মেদ ও সদস্যসচিব মনির আহম্মেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “দলের কেউ এমন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করব এবং তার কঠোর শাস্তি দাবি করব।”

স্থানীয়দের অভিমত ও আতঙ্ক

চরতারাপুর এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত যাঁরা পোশাক কারখানায় কাজ করতেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সম্প্রতি এলাকায় ফিরে মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একজন স্থানীয় দোকানদার জানান, “এই এলাকায় আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন যেভাবে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতে সবাই ভয় পাচ্ছে।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একাধিক রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু যুবক অপরাধে জড়াচ্ছে। এটা এলাকার জন্য খুবই দুঃখজনক।”

অস্ত্র ব্যবসার ইতিহাস

পাবনার কিছু এলাকায় অতীতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও কেনাবেচার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সদর উপজেলায় অন্তত ৭টি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় গ্যাং বা রাজনৈতিক পরিচয়ে যুক্ত অপরাধীদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী চক্রগুলো এইসব অপরাধে মদদ দিচ্ছে, যার কারণে বারবার এই ধরনের ঘটনা সামনে আসছে।

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সাম্প্রতিক এই ঘটনার পেছনে যারা জড়িত, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, বিষয়টি আইনত গুরুতর অপরাধ। ভিডিওর সূত্র ধরে জড়িতদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা প্রশাসনের দায়িত্ব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “এ ধরনের ঘটনা কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করে না, বরং সামাজিক আস্থা ও নিরাপত্তাবোধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।”

পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, স্থানীয় এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি পৃথক টিম কাজ করছে।


“অস্ত্রের ভিডিওটি পুরোনো হলেও তা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” — ওসি, পাবনা সদর থানা

সারসংক্ষেপ 
পাবনায় অস্ত্র কেনাবেচার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওতে কয়েকজন ব্যক্তিকে টাকা লেনদেন ও অস্ত্র পরখ করতে দেখা গেলেও তাঁদের সঠিক পরিচয় এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে তারা যুবদলের কর্মী হিসেবে পরিচিত বলে গুঞ্জন উঠেছে। বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ।

পাবনায় অস্ত্র কেনাবেচার ভাইরাল ভিডিও নতুন করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে বিতর্ক থাকলেও এখনো নিশ্চিত নয় জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয়।

প্রশ্ন উঠছে—এসব ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসনের নজরদারি কতটা কার্যকর? কিংবা রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্মে জড়াচ্ছে, তাদের রুখবে কে?

এম আর এম – ০৩৯৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button