
বাংলাদেশে সোনার বাজারে গত কয়েকদিন ধরে ওঠাপড়ার পর আবারও বড় রকমের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। মাত্র একদিন বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বাজারে সোনার দাম কমেছে ব্যাপক পরিমাণে। ২২ ক্যারেট মানের সোনার প্রতি ভরি দর কমেছে এক হাজার ৫৭৪ টাকা। এই নতুন দাম আগামীকাল, অর্থাৎ শুক্রবার থেকে দেশের সব জুয়েলারি দোকানে কার্যকর হবে।
পরপর দুই দিন বাড়ার পর হঠাৎ দাম কমল
গত দুই দিনের মধ্যে দেশে সোনার দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গত বুধবার একদিনেই ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি দাম ১ হাজার ৫৭৪ টাকা বাড়িয়েছিল। এর আগে মঙ্গলবারও দাম বাড়ার ধারা চলছিল, যেখানে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে গিয়েছিল ২ হাজার ৬২৪ টাকা। কিন্তু এই দাম বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার রাতে বাজুস ঘোষণা করেছে, স্থানীয় বাজারে সোনার দাম আবার কমেছে, তাই নতুন দর ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন দাম কত?
বাজুসের নতুন ঘোষণায় দেখা গেছে,
- ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা হবে।
- ২১ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৮ টাকা।
- ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা।
- সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ১৬ হাজার ১২৭ টাকা।
আগামীকাল থেকে এই নতুন দাম কার্যকর হবে।
সোনার দাম কমার পেছনের কারণ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। এছাড়া ডলার বিনিময় হার এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির পরিস্থিতিও সোনার দামের ওঠানামায় ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি বৈশ্বিক আর্থিক অস্থিরতা কিছুটা কমে আসায় বিনিয়োগকারীরা সোনায় আগ্রহ কমিয়েছেন, যার ফলে দাম কমেছে।
দেশে সোনার সর্বোচ্চ দাম কত?
এর আগে ২৩ এপ্রিল ২০২৫-এ দেশের বাজারে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হিসেবে বিবেচিত। তারপর থেকে দাম কিছুটা ওঠানামা করেছে।
রূপার দাম অপরিবর্তিত
সোনার দাম কমার পরও রূপার দাম তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২২ ক্যারেট হলমার্ক করা রূপার দাম প্রতি ভরি ২ হাজার ৮১১ টাকা থাকলেও, সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম প্রতি ভরি ১ হাজার ৭২৭ টাকা অবিকল রয়েছে।
বাজুসের ভূমিকা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশের সোনার বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং দামের স্থিতিশীলতার জন্য নিয়মিত দাম নির্ধারণ করে। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা, ডলার বিনিময় হার, এবং স্থানীয় চাহিদা-যোগান বিবেচনা করে সোনার দাম ঘোষণা করে। এই নিয়মিত সমন্বয়ই বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সোনায় বিনিয়োগের প্রভাব
বাংলাদেশে সোনা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সময় সোনার চাহিদা বাড়ে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ওঠানামা বাংলাদেশের বাজারেও সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিনিয়োগকারীদের উচিত বাজারের গতিপ্রকৃতি বুঝে ধৈর্য ধরে সঠিক সময়ে সোনা কেনা-বেচা করা।
সোনার দাম ও দেশের অর্থনীতির সম্পর্ক
বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের ধারা ক্রমেই শক্তিশালী হলেও, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ডলার বিনিময় হার দেশের সোনার বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ডলার মূল্য বাড়লে সোনার দাম বেড়ে যায়, আর ডলার কমলে দাম পড়ে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যের ওঠানামাও দেশে সরাসরি ছড়িয়ে পড়ে।
আগামী দিনের পূর্বাভাস
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে বৈশ্বিক বাজারে স্বর্ণের দামের ওঠানামার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও দেখা যাবে। আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে সোনার দাম আবার বাড়তে পারে। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের সচেতন থেকে বাজার পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।