আঞ্চলিক

কর্ণফুলী ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৮ ইউনিট

Advertisement

 চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডে জ্যান্ট অ্যাক্সেসরিজ নামের একটি কারখানায় শুক্রবার দুপুরে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

ভয়াবহ আগুনে কেঁপে উঠল কর্ণফুলী ইপিজেড

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকার কর্ণফুলী ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুর ২টা ৫১ মিনিটের দিকে ‘জ্যান্ট অ্যাক্সেসরিজ’ নামের একটি তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক কারখানায় আগুন লাগে। আগুন দ্রুতই আশপাশের অংশে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় কারখানার কর্মচারী ও স্থানীয়দের মধ্যে।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কন্ট্রোল রুম নিশ্চিত করেছে যে, আগুন নিয়ন্ত্রণে কর্ণফুলী, আগ্রাবাদ এবং ইপিজেড ফায়ার স্টেশন থেকে মোট আটটি ইউনিট কাজ করছে। বিকেল পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলেও দমকল বাহিনী আগুনকে সীমিত রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে।

কারখানার ভেতরে ও আশপাশের পরিস্থিতি

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই কারখানার ভেতর থেকে ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী বের হতে দেখা যায়। তখন সেখানে উপস্থিত শ্রমিকরা দ্রুত কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। অনেকে আবার নিজের মালামাল ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করতে চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মী জানান,

“হঠাৎ আগুন দেখে আমরা সবাই দৌঁড় দিই। অনেকেই জানালার কাচ ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে। ধোঁয়ায় কিছুক্ষণ কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।”

ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত তৎপরতা

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া মাত্রই নিকটস্থ স্টেশনগুলো থেকে দমকল বাহিনী রওনা দেয়। প্রাথমিকভাবে ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে আগ্রাবাদ ও কর্ণফুলী স্টেশন থেকে আরও ছয়টি ইউনিট যোগ দেয়।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান,

“আগুনের ভয়াবহতা বিবেচনায় আমাদের দ্রুত কাজ করতে হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম এখনও চলছে। ধোঁয়া বেশি থাকায় ভিতরে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

আগুন লাগার সম্ভাব্য কারণ ও তদন্ত

আগুন লাগার সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়দের অনেকেই ধারণা করছেন যে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান,

“ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক কাজ শেষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা হবে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

আগের অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তা প্রশ্ন

এ ধরনের কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। কর্ণফুলী ইপিজেডসহ চট্টগ্রামের বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে গত কয়েক বছরে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার অভাবের দিকটি তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফায়ার সেফটি ফোরামের সদস্য প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন,

“প্রতিটি কারখানায় নিয়মিতভাবে ফায়ার সেফটি ড্রিল এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের পর্যবেক্ষণ জরুরি। এসব ব্যবস্থা না থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।”

শ্রমিকদের দুরবস্থা ও মানবিক পরিস্থিতি

এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে কারখানার হাজারো শ্রমিক তাদের কাজের জায়গা হারানোর শঙ্কায় আছেন। অনেকে নিজের পুঁজি দিয়ে কারখানার ভিতরে রাখা মালামাল বা যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কাঁদছিলেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা অনেককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

শ্রমিক সংগঠনের একজন নেতা জানান,

“আমরা দ্রুত মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যেন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা

ফায়ার সার্ভিস এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কারখানার উৎপাদনযন্ত্র, কাপড়ের গুদাম ও বেশ কিছু রপ্তানিযোগ্য পণ্য পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ

ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন, শ্রমিক ও শিল্পমহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফায়ার সার্ভিস ও শিল্প পুলিশের সমন্বয়ে কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

“তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।”

এম আর এম – ০২৮৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button