ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি, শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পিসহ গ্রেফতার ৩

রাজধানীর ফকিরাপুলে ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনার মূল হোতা শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘শুটার বাপ্পি’ অবশেষে যশোর থেকে গ্রেফতার। তার সঙ্গে আরও দুই সহযোগীকেও আটক করেছে ডিবি। উদ্ধার হয়েছে বিপুল অস্ত্র ও গুলি।
কী ঘটেছিল?
রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন ফকিরাপুল এলাকায় গত ১৯ জুন গভীর রাতে একটি প্রাইভেটকারে থাকা মাদককারবারিরা হঠাৎ করে ডিবি পুলিশের একটি দলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ডিবির তিন সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও একটি প্রাইভেটকার। এরপর থেকেই মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ‘শুটার বাপ্পি’কে।
অভিযান ও গ্রেফতার: কোথায় ধরা পড়ল বাপ্পি?
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বাপ্পি যশোরে আত্মগোপনে আছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার (২৮ জুন) রাত আনুমানিক ২টার দিকে যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের একটি দুইতলা বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে বাপ্পি ওরফে মো. আলী ওরফে ফিরোজ আলম ওরফে আহসানুল হকসহ তার দুই সহযোগী—আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে ‘বোমা রিপন’ এবং মো. কামরুল হাসানকে গ্রেফতার করে ডিবি।
অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার: বিপজ্জনক প্রস্তুতি ছিল তাদের
গ্রেফতারের সময় বাপ্পির দেহ তল্লাশি করে উদ্ধার হয় একটি বিদেশি পিস্তল এবং দুইটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন। পরে তার দেয়া তথ্যমতে, ঢাকার ডেমরা থানার বাদশা মিয়া রোডের একটি আবাসিক ভবনের ৫ম তলা থেকে আরও দুইটি বিদেশি পিস্তল, চারটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিনসহ মোট ১৪৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
সব মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে ১৫১ রাউন্ড গুলি ও তিনটি অস্ত্র জব্দ করা হয়।
ডিবির মতে, এত পরিমাণ গোলাবারুদের মাধ্যমে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল এই চক্রের।
কে এই ‘শুটার বাপ্পি’?
শুটার বাপ্পি নামে পরিচিত এই ব্যক্তি রাজধানীর অপরাধ জগতে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত একটি নাম। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে।
তাকে নিয়ে এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার অভিযান চালালেও সফলতা মেলেনি। তবে এবার ডিবি-লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ ইউনিটের তৎপরতায় তাকে অবশেষে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।
কীভাবে চিহ্নিত করা হয় মূল হোতাকে?
ফকিরাপুলে গুলির ঘটনার পর, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকৃত তথ্য এবং মাদক কারবারি আব্দুর রহমানের জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্ত এগোয়।
তদন্তে উঠে আসে যে, মূল পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্র সরবরাহকারী ছিলেন বাপ্পি।
তার অবস্থান শনাক্ত করে একাধিক জেলায় অভিযান পরিচালনা করে ডিবি—ঢাকা, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও শেষমেশ যশোরে সফল হয় তারা।
আসন্ন আইনি পদক্ষেপ ও নিরাপত্তা জোরদার
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে তারা আরও কাদের সঙ্গে যুক্ত এবং ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা ছিল।
“বাপ্পির গ্রেফতার রাজধানীতে সন্ত্রাস ও অস্ত্র ব্যবসার একটি বড় চক্র ভাঙতে সহায়ক হবে”—ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান
কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?
এই গ্রেফতার বাংলাদেশের অপরাধ দমনে এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।
যদিও এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনও থেমে নেই, তবে গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় অপরাধীরা অনেকটাই কোণঠাসা হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এত অস্ত্র আর গোলাবারুদের উৎস কী ছিল? আরও কারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত?
এখন সেই উত্তর খুঁজছে ডিবি।
এম আর এম – ০১০২, Signalbd.com