পলিথিনে মুড়িয়ে হাসপাতালে রাসেলস ভাইপারসহ কৃষক

শরীয়তপুরে জমিতে ঘাস কাটার সময় ভয়ংকর বিষধর রাসেলস ভাইপারের ছোবলে আহত হয়েছেন ৬৫ বছরের এক কৃষক। প্রাণ বাঁচাতে সাপটিকে কাস্তে দিয়ে মেরে পলিথিনে ভরে হাসপাতালে নিয়ে ছুটলেন তিনি। চিকিৎসায় এখন তিনি আশঙ্কামুক্ত।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ঘাস কাটতে গিয়ে রাসেলস ভাইপার সাপের কামড় খেয়েছেন কৃষক আজিজুল হক পাইক (৬৫)। আহত অবস্থায় সাহসিকতা দেখিয়ে সাপটিকে মেরে পলিথিনে ভরে নিজেই হাসপাতালে ছুটে যান তিনি।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার চরভাগা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। কৃষক আজিজুল হক পাইক প্রতিদিনের মতো নিজের জমিতে ঘাস কাটছিলেন। এ সময় হঠাৎ একটি রাসেলস ভাইপার সাপ লুকিয়ে থাকা জায়গা থেকে বের হয়ে তাকে ছোবল মারে।
ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি ভয় না পেয়ে সঙ্গে থাকা কাস্তে দিয়ে সাপটিকে আঘাত করেন। এতে সাপটি মারা যায়। এরপর তিনি মৃত সাপটিকে পলিথিনে ভরে সঙ্গে নিয়ে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান চিকিৎসার জন্য।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
সাহসিকতার নজির রাখলেন বৃদ্ধ কৃষক
৬৫ বছর বয়সেও যে সচেতনতা এবং সাহসিকতা আজিজুল হক দেখিয়েছেন, তা অনেকের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। সাধারণত সাপের কামড় খাওয়ার পর মানুষ ভয় পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কিন্তু আজিজুল হক তার প্রাণ বাঁচাতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছেন।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সাপটি বিষধর — তাই দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। মৃত সাপটিকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসকরাও নিশ্চিত হতে পেরেছেন সাপের প্রজাতি ও প্রয়োগযোগ্য চিকিৎসা সম্পর্কে।
রাসেলস ভাইপার: ভয়ংকর বিষধর সাপ
বাংলাদেশে ‘চন্দ্রবোড়া’ বা ‘উলুবোড়া’ নামে পরিচিত রাসেলস ভাইপার (Russell’s Viper) একটি অত্যন্ত বিষাক্ত ও বিপজ্জনক সাপ। এই সাপ মূলত ফসলের জমি, ঘাসের ঝোপঝাড়, এবং চরাঞ্চলে লুকিয়ে থাকে।
বন্যপ্রাণী গবেষকরা জানান, এই প্রজাতির সাপ সাধারণত সন্ধ্যা বা বিকেল বেলা বেশি সক্রিয় হয়। সাপটি ‘হেমোটক্সিক’ বিষ ছাড়ে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং আক্রান্ত স্থানে পচন ধরায়। দ্রুত চিকিৎসা না পেলে এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে।
সংকটাপন্ন প্রজাতির তালিকায় রাসেলস ভাইপার
২০১৫ সালের আইইউসিএন লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে একটি সংকটাপন্ন প্রজাতি। আগে শুধু রাজশাহী ও বরেন্দ্র এলাকায় এদের দেখা মিললেও এখন তা দেশের পদ্মার চর, নদী তীরবর্তী অঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই সাপ সরাসরি ৬০টিরও বেশি বাচ্চা প্রসব করতে পারে এবং জুন-জুলাই মাসে তাদের প্রজনন মৌসুম। ঘন ঘন হিসহিস শব্দ করা, গোলাকার ছোপ ছোপ দাগ এবং মোটা গঠন এই সাপের বৈশিষ্ট্য।
সচেতনতা ও নিরাপত্তা জরুরি
সাপের কামড় এড়াতে কৃষিকাজে গেলে সবসময় বুট জুতা ও মোটা প্যান্ট পরা উচিত বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের প্রাদুর্ভাব রয়েছে, সেখানে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
সরকারি বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞের মন্তব্য
“রাসেলস ভাইপার ভয়ংকর হলেও এটি খুবই সচেতনভাবে আক্রমণ করে। মানুষ যদি তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে হস্তক্ষেপ না করে, তবে সাধারণত এই সাপ থেকে বিপদ আসে না। তবে কৃষিজমিতে কাজ করার সময় সতর্কতা জরুরি,” — জানান বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা।
সারসংক্ষেপঃ
আজিজুল হক পাইকের সাহসিকতা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া একটি বড় বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করেছে। তবে এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা — বাংলাদেশে আবারও রাসেলস ভাইপার সাপের উপস্থিতি বাড়ছে, এবং তা মোকাবেলায় এখনই সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
প্রশ্ন থেকেই যায়: সাপের সঙ্গে সহাবস্থান শিখব, না কি প্রতিনিয়ত নতুন বিপদের জন্য অপেক্ষা করব?
এম আর এম – ০০৯৫, Signalbd.com