ডেটিং অ্যাপে পরিচয়, প্রেমিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমিককে বাসায় ডেকে এনে ছাদে আটকে রাখে প্রেমিকা ও তার সঙ্গীরা। দাবি করে আড়াই লাখ টাকা। পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে হানিট্র্যাপ চক্রের দুই সদস্য।
ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে সম্পর্ক, তারপর প্রেমিককে ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে আশুলিয়ায় এক নারীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কী ঘটেছিল মূল ঘটনা?
রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটেছে। ‘টান টান’ নামক একটি ডেটিং অ্যাপে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমিক পলাশ হোসেনকে বাসায় ডেকে ছাদে আটকে রাখে প্রেমিকা সুমাইয়া জান্নাত সুমি। পরে তার সঙ্গে থাকা সঙ্গী ইয়াসিন শেখসহ চক্রের আরও সদস্যরা পলাশকে ভয় দেখিয়ে দাবি করে আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ।
ঘটনাটি ঘটে ২০ জুন রাত ৯টার দিকে। পলাশ মোটরসাইকেল চালিয়ে জামগড়ার শিমুলতলা এলাকায় সুমির দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছালে তাকে পরিকল্পিতভাবে ছাদে নিয়ে আটক করা হয়। একপর্যায়ে চক্রটি তার কাছ থেকে ১২,৭০০ টাকা, একটি দামি আইফোন, মোটরসাইকেলের চাবি এবং এটিএম কার্ড লুটে নেয়।
পরে গভীর রাতে পলাশকে অচেনা একটি স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
পুলিশের অভিযান ও গ্রেপ্তার
পরদিন ভুক্তভোগী পলাশ আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রথমে ২৫ জুন বিকেলে জামগড়ার মীরবাড়ি এলাকা থেকে ইয়াসিন শেখকে এবং রাতে সুমাইয়া জান্নাতকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানায়, এই চক্রের সদস্যরা একাধিকবার একই কায়দায় মানুষকে ফাঁদে ফেলে অপহরণ ও লুটপাট করেছে।
অভিযুক্তদের পরিচয় ও অতীত রেকর্ড
গ্রেপ্তারকৃত ইয়াসিন শেখ (২৫) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাসিন্দা এবং সুমাইয়া জান্নাত ওরফে সুমি (২৫) মাগুরা সদর উপজেলার বাসিন্দা। তারা দুজনই দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সুমাইয়া একটি হানিট্র্যাপ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তার সহযোগী ইয়াসিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
অপহরণের নতুন কৌশল ও সামাজিক প্রভাব
এই ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। আধুনিক প্রযুক্তি, স্মার্টফোন ও ডেটিং অ্যাপের সহজলভ্যতার কারণে তরুণ-তরুণীদের অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন।
বিশেষ করে “প্রেমের সম্পর্কের আড়ালে” যে ভয়ঙ্কর প্রতারণা চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনলাইনে পরিচয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিশ্বাস বা তাড়াহুড়া অনেক সময় ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।
পুলিশের সতর্কবার্তা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বলেন, “এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে একাধিক ব্যক্তিকে একই কৌশলে ফাঁদে ফেলেছে। তদন্ত চলছে—চক্রের আরও সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও জানান, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অজানা কাউকে বিশ্বাস করে দেখা করতে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে।”
সারসংক্ষেপঃ
এই ঘটনার পর সমাজে ডেটিং অ্যাপ ও অনলাইন পরিচয়ের বিষয়ে সতর্কতা আরও বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। সহজ সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছেন। পুলিশি তৎপরতা বাড়লেও ব্যক্তিগত সচেতনতা ছাড়া এই প্রবণতা ঠেকানো কঠিন।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, প্রযুক্তির এই যুগে নিরাপদ সম্পর্কের সংজ্ঞা কীভাবে তৈরি হবে?
এম আর এম – ০০৫৬, Signalbd.com