ব্যবসায়ীর দাড়ি ধরে টানাটানি, ভিডিও শেয়ার দিয়ে যা বললেন সারজিস

মানিকগঞ্জের ঘিওরে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে আরেক ব্যবসায়ী তাকে দাড়ি ধরে টেনে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার থানা রোড এলাকায় ঘটে। ভিডিওর মাধ্যমে এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
ঘটনাপ্রেক্ষিত
ঘটনার ভুক্তভোগী আলী আজম মানিক (৩৫) ঘিওরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত ‘মানিক কম্পিউটার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর মালিক। অপরদিকে অভিযুক্ত নাসিম ভূঁইয়া একই উপজেলার ঘিওর বাজার এলাকার পরিচিত টিন ব্যবসায়ী।
ভিডিওতে দেখা যায়, নাসিম ভূঁইয়া আলী আজম মানিককে দাড়ি ধরে টেনে তুলে মারধর করছেন। ভিডিও নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করে আলী আজম লেখেন, “যত পরিচয়ই থাকুক না কেন, এই নরপশুর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
অভিযোগ ও ঘটনার বিবরণ
আলী আজম মানিক আজ মঙ্গলবার সকালে ঘিওর থানা পুলিশকে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি জানান, রাত ৯টার সময় নাসিম ভূঁইয়া একটি কাজের জন্য তাঁর দোকানে আসেন। তখন তিনি অন্য এক কাস্টমারের কাজ করছিলেন। নাসিমকে অপেক্ষা করতে বললে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে এবং দাড়ি ধরে টানাটানি ও মারধর চালায়।
আলী আজম বলেন, “আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করেন এবং নাসিমকে থামিয়ে নিয়ে যান।”
অভিযুক্তের বক্তব্য
অভিযুক্ত নাসিম ভূঁইয়া বলেন, “আমি জমির নামজারির জন্য আবেদন নিয়ে দোকানে গিয়েছিলাম। সে প্রথমে সন্ধ্যায় আসতে বলেছিল। পরে নানা অজুহাতে কাজ করাতে অস্বীকার করে। আমি চলে আসছিলাম, তখন সে আমাকে গালি দেয়, তাই আমি প্রতিহত করেছি।” তবে দাড়ি ধরে টানার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
নাসিম জানান, “আমি বিএনপির সমর্থক, তবে কোনো পদে নেই। রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর কোনো সুযোগ নেই।”
মামলা ও পুলিশি পদক্ষেপ
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, “আলী আজম মানিক লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিষয়টির গুরুত্ব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘিওরসহ মানিকগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং স্থানীয়রা এই ধরনের অশোভন আচরণ ও হিংসাত্মক ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে শান্তি ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা উচিত বলে স্থানীয়রা মন্তব্য করেছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হয়।
বিশ্লেষণ: ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সম্মানের গুরুত্ব
বর্তমান সময়ে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সম্মান এবং সদয় আচরণের বিকল্প নেই। ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি বা দ্বন্দ্ব দ্রুত রূপ নিতে পারে মারাত্মক হিংসায়। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তা সমগ্র সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং দ্রুত সমাধানের দাবি তোলে।
ঘিওরের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি যে, ব্যবসায়িক বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আইনি পথ অনুসরণ করা উচিত। এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা সামাজিক সমঝোতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর।
কীভাবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়?
- শান্তির প্রচার: ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব দ্রুত মীমাংসার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগ বাড়ানো দরকার।
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষা: পুলিশকে কড়া ভূমিকা নিতে হবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটে না।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও শিষ্টাচার নিয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজন।
- মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্ব: ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সঠিক তথ্য প্রচার করা গুরুত্বপূর্ণ। অবাঞ্ছিত গুজব ও ভুল তথ্য এড়ানো উচিত।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ব্যবসায়ীর সঙ্গে মারধরের ঘটনাটি সমাজে ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সম্মানের গুরুত্ব পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দেয়। পুলিশের তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি উঠেছে।