আঞ্চলিক

জামালপুরে চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ, অভিযুক্ত আরেক চিকিৎসক

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিং নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ডেন্টাল সার্জনের বিরুদ্ধে। চিকিৎসক মহলে উত্তেজনা, কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আরেক চিকিৎসককে মারধরের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি হাসপাতালজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ঘটনার বিস্তারিত:

সোমবার দুপুরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. তরিকুল ইসলাম রনি নিজ কক্ষে আক্রান্ত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, একই হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন ডা. ইকরামুল হক হিটলু এবং তার স্ত্রী ডা. শারমিন মিলে রনিকে গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

ডা. রনি বলেন, “হিটলু দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালের আউটসোর্সিং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটাতে চাইছিলেন। সম্প্রতি ৪৪ জনের নিয়োগ হয়, যেখানে হিটলু তার পছন্দের কিছু প্রার্থীকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দিতে চাপ দিয়েছিলেন। আমি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। এর জের ধরেই আজ আমার কক্ষে ঢুকে তারা আমাকে মারধর করেন।”

হাসপাতালটিতে সম্প্রতি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়। সূত্র জানায়, ডা. হিটলু দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে একক আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছিলেন।

এছাড়া গত রোববার তিনি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহানের গাড়ি থামিয়ে তাকে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি:

ঘটনার পর জরুরি সভা ডাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সভায় সিভিল সার্জন, সহকারী পরিচালকসহ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়—আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে।

জামালপুর ড্যাবের সভাপতি ডা. আহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, “একজন আরএমওর উপর এভাবে হামলা সহ্য করা যায় না। ইতোমধ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দাবি মানা না হলে আমরা হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসাসেবা স্থগিত করব, তবে জরুরি বিভাগ চালু থাকবে।”

প্রশাসনের অবস্থান:

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল হক জানান, “একজন চিকিৎসক হয়ে আরেক চিকিৎসককে মারধর করার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জামালপুর থানার ওসি ফয়সাল আতিক জানিয়েছেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”

অভিযুক্তের বক্তব্য:

সংবাদকর্মীরা যোগাযোগ করলে ডা. ইকরামুল হক হিটলু বলেন, “এ বিষয়ে পরে কথা বলব।” এরপর তিনি কল কেটে দেন এবং আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

ভবিষ্যৎ দিক ও সম্ভাব্য ফলাফল:

ঘটনার জেরে চিকিৎসক সমাজের মধ্যে ভীতি ও অসন্তোষ বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। না হলে হাসপাতালের সেবাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বচ্ছ নিয়োগ ও প্রশাসনিক কঠোরতা না আনলে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে।

সার-সংক্ষেপ 

চিকিৎসকদের মাঝে বিভাজন ও দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে একজন চিকিৎসকের হাতে আরেক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়া পেশাগত শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধের চরম লঙ্ঘন। এই ঘটনা শুধু আইনি নয়, সামাজিক ও নৈতিক বিচারেরও দাবি রাখে।

এম আর এম – ০০২১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button