বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গুলশানে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক, আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়।
রবিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্ক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মতবিনিময় হয়।
বৈঠকের বিস্তারিত ও উপস্থিত ব্যক্তিরা
সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার।
অন্যদিকে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ছিলেন ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সহযোগিতা এবং খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
বৈঠকে ইসহাক দার বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের জনগণের সম্পর্ক স্বাভাবিক ও সহযোগিতামূলক করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। এছাড়া, দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রেও তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের কাছে জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য জটিলতা রয়েছে এবং তাঁর চিকিৎসা নিয়ে দলের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ চলছে।
সফরের উদ্দেশ্য
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকায় আসেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম।
এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা। ঢাকা সফরের অংশ হিসেবে তিনি সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করছেন।
রাজনৈতিক তাৎপর্য ও প্রতিক্রিয়া
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিকের সাক্ষাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তৎপরতা তীব্র হচ্ছে, তখন বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ও সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল এ ধরনের বৈঠককে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ, এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট
দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ত্রিমুখী সম্পর্ক এই অঞ্চলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়, যাতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
এই প্রেক্ষাপটে ইসহাক দারের সফর ও বিএনপির সঙ্গে তাঁর বৈঠককে অনেকেই কূটনৈতিক গুরুত্ববহ ঘটনা হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানি প্রতিনিধির বৈঠক শুধু সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক তৎপরতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। এ কারণে এ ধরনের সাক্ষাৎকে স্বাভাবিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখা উচিত।
শেষ কথা
খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের এই সাক্ষাৎ নিছক সৌজন্য বৈঠক হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই ধরনের যোগাযোগ কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ভর করবে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।
এম আর এম – ১০১১, Signalbd.com



